সৎ উদ্দেশ্য ও আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে যেখানে, যেভাবে হোক তা বাস্তবায়ন করা যায় তার উজ্জ্বলতম উদাহরণ হলো চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়নের বারোমাসিয়া গ্রামের ‘তৌহিদুল আনোয়ার হাইস্কুল’। প্রত্যন্ত এলাকায় হলেও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্যূতি ছড়িয়ে পড়েছে আজ সারা দেশে। একে তো বিনা বেতনে পড়ানো হয় তার ওপর শিক্ষার্থীদের পোশাক দেওয়া হয় বিদ্যালয় থেকেই। শুধু তা–ই নয়, দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য সাইকেলও দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। দূরে থাকে, এমন ৪০ জন শিক্ষার্থী এবার সাইকেল পেয়েছে।
২০২০ সালে আহমেদ শামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে তৌহিদুল আনোয়ার হাইস্কুল নামের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। পত্রিকা মারফত জানা গেছে, দেড় একরের বেশি জায়গায় সুবিশাল ক্যাম্পাসে চারতলা ভবনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে শুরু করে নানা কার্যক্রম। বাণিজ্য, মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগের ৬১৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কম্পিউটার, সংগীত, সাহিত্য, ক্রীড়াসহ বিষয়ভিত্তিক ২২ জন শিক্ষক রয়েছেন বিদ্যালয়টিতে। ৩০টি কম্পিউটার–সংবলিত সুবিশাল ল্যাব, সাড়ে তিন হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ, সততা স্টোর, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, ছবির গ্যালারিসহ নানা ব্যতিক্রমী আয়োজন রয়েছে এখানে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফটিকছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ এ জনপদ ছিল শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। আশপাশে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় প্রাথমিকেই থেমে যেত অনেকের শিক্ষাজীবন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বদলে যায় বারোমাসিয়া গ্রামসহ আশপাশের পাঁচ গ্রামের দৃশ্যপট। এই বিদ্যালয়ের ভিন্ন ধরনের পাঠদান ব্যবস্থার পাশাপাশি খেলাধুলা আর সাহিত্য–সংস্কৃতিতে জোর দেওয়া হয়। এসবের জন্য আছেন আলাদা শিক্ষকও।
বিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড কেবল এর চার দেয়ালেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং বলা যায় জনপদজুড়েই চলে কার্যক্রম। বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাদক ও মুঠোফোনে আসক্তি এবং বাল্যবিবাহবিরোধী সভার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া পাড়ায় পাড়ায় গিয়েও বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নিয়মিত এসব নিয়ে সভার আয়োজন করেন। এমন বহুমুখী চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের মানসিকতাও বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ট্রাস্টের অধীন পরিচালিত তৌহিদুল আনোয়ার হাইস্কুল পাঠদানের অনুমতি পেলেও এখনো স্বীকৃতি পায়নি। আমরা খুব আশা করব এই স্কুলটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সরকারের তরফ থেকেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। সে সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান যে পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে তা যেন অব্যাহত থাকে। শুধু তাই নয়, এই স্কুলের পরিচালন পদ্ধতি যেন অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুসরণ করে তার ব্যবস্থাও করা।
এ মুহূর্তের সংবাদ