নিজস্ব প্রতিবেদক »
মরজিনা বেগমের ৪ জুলাইয়ে শরীরে প্রচ- জ্বর আসে। একই সাথে পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। সারারাত এভাবে কেটে যায়, পরের দিনে (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মরজিনার মতো অনেক রোগী জ্বর-পাতলা পায়খানা এবং বমির লক্ষণ নিয়ে ডেঙ্গু রোগীরা আসছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদি।
তিনি আরও বলেন, জ্বর, সর্দিÑকাশি, বমি, পাতলা পায়খানা বেশি হচ্ছে রোগীদের। এ তিন লক্ষণ নিয়ে হাসাপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। পরে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। সব রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। ডেঙ্গু রোগীর মূল চিকিৎসা বিশ্রামে থাকা, পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাওয়া। রোগীরা ৪-৫ দিন জ্বরে ভোগার পর রক্তে তরলের ঘাটতি দেখা দেয়। তার জন্য বেশি পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসাসেবা নেই। জ্বর হলে নাপা, প্যারাসিটেমল, পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন এভাবে লক্ষণ দেখে দেখে ওষুধ দেওয়া হয়।
হাসপাতালে কখন রোগীকে ভর্তি করানো দরকার- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব রোগীর ক্ষেত্রে কিছু বিপজ্জনক চিহ্ন থাকে। সেগুলো হলো-প্রেশার মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়া, ঘন ঘন বমি করা, একনাগারে পাতলা পায়খানা হওয়া। এ অবস্থায় অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট ৭৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুতে জানুয়ারিতে ৫৬, ফেব্রুয়ারি ১১, মার্চে ৭, এপ্রিলে ১৩, মে মাসে ৩২, জুনে ২৮২ এবং জুলাইয়ে এ পর্যন্ত ২০০ জনের উপরে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নগরের দুই সরকারি হাসপাতালে ভিন্ন চিত্র
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। প্রায় রোগীদের সাথে কথা হয়েছে প্রতিবেদকের। সেখানে কোনো ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে না। মশারি থেকে স্যালইন, ওষুধ সবকিছু হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে চমেক হাসপাতালে ঠিক তার উল্টো। সেখানে মেডিসিন বিভাগের (১৪, ১৫, ১৬ ওয়ার্ড) শিশু বিভাগের (৮ ও ৯ ওয়ার্ডে) ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। নাপা ছাড়া কোনো কিছুই পাচ্ছেন না রোগীরা। এছাড়া মশারি না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন রোগীরা।
হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওর্য়াডের মো ওসমান গণি নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, আমি জুনের ১ তারিখ ভর্তি হয়েছি। তখন থেকে একটি স্যালাইন আর ৪-৫ টা নাপা পেয়েছি। আর সবকিছু বাইরে থেকে নিতে হচ্ছে। মশারিও আমাদের দেয়নি। এখানে থেকে কিনে ব্যবহার করছি।
শাইলা নামে আরও এক রোগী বলেন, ‘সব কিছুই বাইরে থেকে নিলাম। ৩টা নাপা পেয়েছি। আর কিছু পায়নি। মশারিটা আমরা ব্যবস্থা করেছি।’
রোগীদের ওষুধ না পাওয়া নিয়ে জানতে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. শামীম আহসানকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
মশারিতে টাঙানোতে উদাসীনতা
গতকাল চট্টগ্রাম জেনালে হাসপাতাল এবং চমেক হাসপাতালে দেখা যায় বেশিরভাগ রোগী মশারি উঠিয়ে রেখেছেন। জেনারেল হাসপাতালের ১০ নম্বর পুরুষ ওয়ার্ডে ১০টি শয্যার মধ্যে ৬টির রোগীই মশারি উঠিয়ে রেখেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা যেন দেখেও না দেখার ভান করছেন। চমেক হাসপাতালে একই চিত্র দেখা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মশারি ব্যবহার করা অবশ্যই দরকার। কিন্তু আমাদের রোগীরা সচেতন নন। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে এডিস মশা কামড় দিয়ে যদি ওই মশা নতুন করে কাউকে কামড় দেয় তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা থাকে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে গতবারের চেয়ে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘আশঙ্কাজনক’। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককেও (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) একই চিঠি পাঠানো হয়েছে।