রাজু কুমার দে, মিরসরাই
ব্যবসায় লোকসান গুনে চলে যেতে চেয়েছিলেন প্রবাসে। কিন্তু মায়ের বাধায় যাননি। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে কিছু করবেন। অবশেষে কৃষিতে মনযোগী হয়ে চাষ করলেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজের। আর এতে বাজিমাত করলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের মসজিদ্দিয়া গ্রামের জামশেদ আলমের পুত্র ইকবাল হোসেন সোহেল। তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। আর তরমুজ চাষে নেয়া হয়েছে মালচিং ও আর্গানিক পদ্বতি। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে প্রথমবারের মতো ৮জন কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হয়েছে। প্রায় এক হেক্টর জমিতে আবাদকৃত তরমুজ ক্ষেতে ইতোমধ্যে ফলন এসেছে। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের আওতায় আবাদ করা তরমুজ ক্ষেতগুলোতে নেয়া হয়েছে আর্গানিক ও মালচিং পদ্ধতি। পোকা-মাকড় দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। বর্তমানে ইয়েলো কিং ও ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ চাষ করা হলেও আগামীতে অন্য জাতগুলো চাষ করা হবে। উপজেলার জোরারগঞ্জ, হিঙ্গুলী, খৈয়াছরা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় এই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদ করা।
উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছরা ইউনিয়নের মসজিদ্দিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি ইকবাল হোসেন সোহেল বলেন, ‘আমি ব্যবসায় লোকসানের পর প্রবাসে চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার মা বাধা দেয়। পরে ইউটিউব দেখে শখের বশে ৫০ শতক জমিতে ব্ল্যাক বেবি, ইয়োলো কিং জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। প্রতিটি তরমুজের বর্তমান ওজন দেড় থেকে চার কেজি। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। কম খরচ ও পরিশ্রমে তরমুজ চাষ করে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে। এটি যেমন রসাল, তেমনি সুমিষ্ট।
তিনি আরও বলেন, ৫০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষে আমার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এতে মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা ও কিছু চারা সহায়তা পেয়েছি। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। প্রায় ৫ হাজার কেজি ফলনের আশা করছি। সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হবে।
সরেজমিনে ১২ নম্বর খৈয়াছরা ইউনিয়নের মসজিদ্দিয়া গ্রামের তরমুজ চাষি ইকবাল হোসেন সোহেলের ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ ও কালো তরমুজ। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ছুটে আসছে তরমুজ ক্ষেত দেখার জন্য। অনেকে পাইকারি দামে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তেমননি একজন মিরসরাই সদরের সোহেল। তিনি জানান, লোকমুখে শুনে হলুদ রঙের তরমুজ দেখতে এসেছি। কিন্তু দেখতে এসে তরমুজ খাওয়ার লোভ সামলিয়ে রাখতে পারলাম না। তাই দুই কেজি ওজনের একটি তরমুজ ১৪০ টাকা দিয়ে কিনে বন্ধুদের নিয়ে খেয়েছি। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও খুবই মিষ্টি।
এদিকে কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে তরমুজ চাষের জন্য বিনামূল্যে বীজ, মালচিং পেপার, ফেরোমন ফাঁদ, জৈব সার দিয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় অধিক লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন অনেক চাষি।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, খৈয়াছড়া ইউনিয়নের তরমুজ চাষি ইকবাল হোসেন সোহেলের ক্ষেতে খুবই ভালো ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। চলতি বছর প্রথমবারের মতো মিরসরাইয়ে এক হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ৮জন কৃষকের মাধ্যমে এই তরমুজ আবাদ করা হয়। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন তরমুজ উচ্চ মূল্যের ফসল হওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা।