সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশ সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, বরং এটি দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
শিথিল বৈদ্যুতিক সংযোগ থেকে এ আগুনের সূত্রপাত বলে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রাথমিক তদন্তের ফলাফলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান জ্যেষ্ঠ স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
কমিটি আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২৬ ডিসেম্বর রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ওই ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। আগুনে ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুনের উৎস নিয়ে জনমনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়।
অগ্নিনর্বাপণ বাহিনীর ১৯টি ইউনিট প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আর সম্পূর্ণরূপে নেভাতে লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা।
আগুনে ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলার অন্তত ২০০টি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া।
ভবনটিতে অবস্থিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু; ডাক ও টেলিযোগাযোগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা না-কি নাশকতা তা তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার।
অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহানুর জামান নয়ন (২৪) কর্তব্যরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
রাস্তা পার হয়ে পাম্পের সঙ্গে পানির পাইপ লাগাতে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক নয়নকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যক্রম সচল রাখতে অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার দপ্তরে অস্থায়ী অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এদিকে আগুনের ঘটনার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, সচিবালয়ে ‘ঘাপটি মেরে থাকা শেখ হাসিনার দালালেরা’ তাদের অপকর্ম ঢাকতে ফাইলগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে প্রতিক্রিয়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। এই মুহুর্তে আছি নীলফামারিতে, যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা ব্যাক করছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহেদ কামাল আগুনের ঘটনা সম্পর্কে সচিবালয়ের সামনে ২৬ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ৩টি জায়গায় একসঙ্গে আগুন দেখা গেছে। যখন স্পার্কিং হয়, যদি বিদ্যুৎ লাইনের শর্টসার্কিট হয়, এটা হতে পারে।’
‘তবে আমরা এটা এখনও নিশ্চিত বলব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তদন্ত শেষ করছি। কিন্তু এটা হতে পারে। এটাই হয়েছে — আমরা তা বলবো না,’ বলেন তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, ‘সচিবালয়ের আগুন লাগার কারণ সম্ভবত ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন ছিল। এক জায়গায় আগুন ধরলে বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এটা হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক কারণ এখনও আমরা বের করতে পারিনি।’