তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কারও সঙ্গে কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘(যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফরে) কেউ আমাকে এ কথা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু) জিজ্ঞাসা করেনি। আসলে এ ব্যাপারে কোনও কথাই হয়নি।’

শুক্রবার বিকাল ৪টায় গণভবনে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্য শেষ হলে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক জানতে চান, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কোনও কথা বলেছেন কিনা? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘না, আমার তো মনে পড়ে না। এ ধরনের কোনও কথা হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী উল্টো জানতে চান ‘এ ধরনের কোনও কথা কোথাও হয়েছে কী না?’ জবাবে প্রশ্নকারী ওই সাংবাদিক বলেন, ‘এমনটা শোনা গেছে’। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরকম কোনও হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনও কথা বলেননি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক অভিজ্ঞতা ২০০৭-০৮ এ হয়ে গেছে না আমাদের! তারপর আবার কেউ কি চায়? চাইতে পারে? আর এই ব্যবস্থাটা তো বিএনপিই নষ্ট করছে। এই সিস্টেমটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) তো বিএনপি নষ্ট করে দিয়েছে।’ খবর বাংলাট্রিবিউন।

বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা, কেউ কান দেবেন না
‘বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

জি-২০ সম্মেলন থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’, বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিএনপির এই অভিযোগের কোনও উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান।’

বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, ‘কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয়, তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দরিদ্র বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।’

বড়লোক ও সাধারণদের জন্য বিদ্যুতের দামে আলাদা ‘স্লট’ করবো
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো। ইলেকশনের পরে, যদি আসতে পারি আবার করবো। তারপর দেখি কে সাহস পায় নিতে ক্ষমতায় আসতে। সব গুছিয়ে দেওয়ার পরে এখন ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির কথা। পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি তো শুনতে রাজি না। আজ না, ৭৭ বছর বয়স। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। তাহলে আমার রাজনীতির বয়স কত? স্কুল জীবন থেকে মিছিল করা শুরু করেছি। এই পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ শতভাগ দেই। কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসবো? সবাই একটু টের পাক যে (বিএনপি সরকারের সময় বিদ্যুতের অবস্থা) কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলেছিলাম, প্রতিদিন যেন কিছুটা লোডশেডিং দেওয়া হয়। তাহলে মানুষের মনে থাকবে যে, লোডশেডিং আছে। পয়সা দিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন আক্কেলটা ঠিক হবে যে, এই অবস্থা তো ছিল। এখন তো আমরা করে দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমি ভর্তুকি দেবো?

সবাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও ভর্তুকির সুযোগটা অর্থশালী-বড়লোকরা নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেখানে একটা স্লট ঠিক করবো। এখন থেকে কত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, তাদের জন্য এক দাম। আর তার থেকে যারা বেশি ব্যবহার করবে তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, ওইভাবে কয়েকটা স্লট করে দেবো। যে বেশি ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে। সেইভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। এটার ওপর কাজ চলছে, এভাবে আমরা করে দেবো।

হঠাৎ নির্বাচন নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন, সন্দেহ হয় রে!
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সবার এত মাথাব্যথা কেন? সন্দেহ হয় রে, এটুকুই বলতে হয় সন্দেহ হয় রে ! আসল হলো নির্বাচনটাকে বানচাল করে দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার এবং ওয়াশিংটনের আকাক্সক্ষা ছাড়া অন্য কিছু আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যারা জানে নির্বাচনে গেলে জনগণের ভোট পাবে না, তারা সব জায়গায় গিয়ে ধর্না দিয়ে যাচ্ছে। তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থাকতে এত বেশি মানি লন্ডারিং করে এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, তারা অবাধে সেই টাকা খরচ করে যাচ্ছে। এর সঙ্গে এটা প্রচার। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা বাস্তব অবস্থাটা বোঝে কিনা আমি জানি না। দেখি তারা এই একই কথা। ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। সেটা আমি স্পষ্ট বলে আসছি। কেন? ভোটের জন্য আমরা সংগ্রাম করলাম আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আজ আমাকে ভোটের অধিকার শেখাতে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব স্পষ্ট সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা এটাই মেনে চলি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। নির্বাচন নিয়ে একটু খুব বেশি কথা বলি, আমাদের দেশের কিছু লোকৃ। যারা নির্বাচন বয়কট করেছে অথবা নির্বাচনকে সব সময় কলুষিত করেছে অথবা ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে, এখন তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা। দুর্ভাগ্য হলো সেটাই। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় এসে জনগণের ভোট চুরি করে, ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই সময় নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে যাদের উদ্বেগ দেখি নাই। অথচ ২০০৮ এর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলো, বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টা সিট। বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল মোট ৩০টা সিট।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নিসন্ত্রাস-মানুষ হত্যাসহ এমন কোনও অপকর্ম নেই যা করেনি। হরতাল-অবরোধ আমরা দেখলাম। ২০১৮ এর নির্বাচনে যোগদান করে ৩০০ সিটে ৭০০ এরও বেশি নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে ইলেকশন থেকে সরে গেলো। ইলেকশনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করলো। এখন তাদের মুখে আবার অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরেপক্ষ নির্বাচনের কথা শুনি এবং সব জায়গায় এটা প্রচার করে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা আমাদের দেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আমার প্রশ্নটা হলো যখন মিলিটারি ডিকটেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। যখন ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রম করেছি, স্লোগান দিয়েছি আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। এবং নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো, ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাস করা, নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আলাদা করে, বাজেট আলাদা করে দিয়ে আরও শক্তিশালী করা, জনগণের মাঝে ভোটের অধিকারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের যে ভোটের অধিকার ‘৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া, এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের জোট আমরা সবাই এক হয়ে আন্দোলন করি, তার জন্য আমাদের বহু মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সেই কথাটা বলেছি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র)। আমাকে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ভোটরে অধিকার আদায়, আন্দোলন সংগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি। তারপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নির্বাচন হয়েছে বলেই জনগণ বারবার ভোট দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল, ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশকে কী উন্নতি দিয়েছে? মাত্র ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছে? পারেনি, দুর্ভিক্ষ ছিল। সব সময় দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকতো। মানুষ একবেলা খাবার জোটাতে পারতো না। বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে পড়াতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টিহীনতা প্রতিনিয়ত ছিল। নারীর ক্ষমতায়ন ছিল না। এখন যতটুকু বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পরেই এই উন্নতিটা হয়েছে। তাহলে এখন এত প্রশ্ন আসে কেন, সেটাই আমার কথা।

তিনি বলেন, একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করে ফেলছে, সেটাই সকলের মাথা ব্যথার কারণ হলো কিনা? এটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়! সেই প্রচেষ্টা কিনা, এই শঙ্কাটা আমারও আছে। কারণ হঠাৎ এত এই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষে নির্বাচনের কথা তো আমিই বলেছি। এক সময় ছিল অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। এটা থেকে আমরা রেহাই দিয়েছি। আব্রাহাম লিংকনের অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল তো আমরা স্টাবলিস্ট করেছি। সব ধরনের অপকর্ম থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছি।

আইয়ব খান, জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবই তো গোস টু। আওয়ামী লীগ আসার পর আওয়ামী লীগের তো ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগকে জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করি আমরা। দেশের মানুষ এখন জানে, নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছি, নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছি, নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। দারিদ্র বিমোচন এটা কাদের সময় হয়েছে? ৪১ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এটা এনজিও বা কারও মাধ্যমে তো হয়নি। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমেও হয়নি। বরং আমরা ক্ষুদ্র সঞ্চয় করাচ্ছি। আমাদের কর্মসূচি ক্ষুদ্র সঞ্চয়। দেশে হতদরিদ্র মাত্র ৫ শতাংশ, ওটুকুও থাকবে না। অন্তত দুই কাঠা জমি আর একটা বাড়ির মালিক তো সবাই থাকবে। তারপর যার যারটা নিজে করে খাবে। এই জায়গায় তো আমরা আনতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, কাজেই এটা তো একটা সন্দেহের ব্যাপার আছেই। তবে আমাদের মানুষ কতটুকু সচেতন, সেটা হলো কথা। কিছু লোক তো আছে, চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির। তাদের তো আর কিছু করা যায় না।

‘রাস্তায় ঘেউ ঘেউ করলেই বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে ধরে না’
সংসদের বাইরের কোনও দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়ালো, সেটাতে কিন্তু বিদেশে কখনও বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত।

বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিট নেই তাদের বিরোধী দল হিসেব করে তো রাখা যায় না। বলা যায় না।

বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, তোমাদের যা খুশি করো। কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আসো।

তিনি বলেন, এত টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক কথা মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। খুব বলেন, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না, আর বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করতো? আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকতো না, থাকবে অস্তিত্ব? থাকবে না।

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলো। আমরা তো তাও খেয়ে-পরে আছি। যান না, আমেরিকায় যান, ইংল্যান্ডে যান। বিভিন্ন দেশে যান সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কতো দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না।

সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্যমন্দা। এটা কেউ বলবে কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। ওয়াশিংটনে তো বাজার করে আমরা রান্না করে খেয়ে আসছি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরো ‍মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি। কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।

পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া নিয়ে কোনও একজনের বক্তব্যের উদ্বৃতি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বলে দিলেন পাঙ্গাশ মাছ খেতে পারেন না। আমি যদি জিজ্ঞাসা করি ২০০৯ বা ১৯৯৬ সালের আগে কে কত পাঙ্গাশ মাছ খেয়েছেন। মানুষ যেখানে আগে নুনভাত খেতে পারতো না, এখন অন্তত পাঙ্গাশ মাছের কথা চিন্তা করে। এই মাছ আগে বরিশাল আর যমুনা নদীতে পাওয়া যেত। সারা দেশে পাওয়া যেত না। গবেষণার মাধ্যমে এটি চাষ হয় এবং সারা দেশে পাওয়া যায়। যেখানে মানুষ নুনভাতের জন্য হাহাকার করতো। ফেন চাইতো, ‍নুনভাত চাইতো, সেখানে মানুষ মাছ মাংস ডিম খাওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারে। এইটুকু মানুষের জন্য করতে পারছি, আমি ওইভাবে দেখি। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল সেটা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আগে বিদেশে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক সিটকাতো। এখন আর সিটকায়? বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা বাসাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করি।

সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুমকিতে কিছু মনে করি না
বিএনপির চলমান আন্দোলন ও সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুমকিতে কিছু মনে করছেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গে সাংবাকিদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তো তারিখ (আন্দোলনের) দিয়েই যাচ্ছে। অমুক তারিখে ফেলে দেবে, তমুক তারিখে ফেলে দেবে। দিতে থাক, অসুবিধা নেই। এটার জন্য আমি কিছু মাইন্ড করছি না। আমি মনে করি এটা ভালো। আন্দোলনটা থাকলে মানুষও বেশ গরম থাকে। আমার পার্টিও ভালো থাকে। তখন তারা আবার নেমে পড়ে। কেউ নাই দেখে মাঝখানে একটু ঢিলা দিছিল। এখন এমপি সাহেবরা দৌড়াচ্ছে এলাকায়। আমি আবার খবর নিই তো কে কতবার এলাকায় গেল না-গেল। এখন সবাই দৌড়াদৌড়ি-ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। যার যার পজিশনে একটু ভাটার টান দিয়েছিল। তারা দেখছি এখন ভালোর দিকে এগোচ্ছে। এটা মানুষের জন্য ভালো।

জনগণই ঠান্ডা করে দেবে
বিএনপির আন্দোলনে কোনও বাধা দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাদের (বিএনপি) যে আন্দোলন আমরা তো সেই আন্দোলনে বাধা দিচ্ছি না। আন্দোলন করে যাচ্ছে। লোকসমাগম করছে। খুব ভালো কথা। এতকাল চুরিচামারি করে যে পয়সা বানিয়েছিল, আর যত টাকা মানি লন্ডারিং করেছিল, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকা তো যাচ্ছে। ওদের আন্দোলনকে আমি ওইভাবে বিবেচনা করি।

তিনি আরও বলেন, তারা যত আন্দোলন করবে, সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। তাদেরও সেট করা লোক আছে। আসে, খায়দায়, চলে যায়। মানুষ যদি এই দুঃসময়ে কিছু টাকা পায় তো ভালো। কাজেই ওই টাকাগুলোও বের হোক। বের হওয়াটা দরকার। কাজেই টাকা বেরোচ্ছে, মানুষও কিছু পাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি বলেছি কোনও কিছু বলার দরকার নেই। তারা আন্দোলন করতে থাকুক। তবে হ্যাঁ, মানুষের যদি কোনও ক্ষতি করতে চেষ্টা করে, ও রকম অগ্নিসংযোগ, আগুনসন্ত্রাস…ওই ধরনের কিছু যদি করে তাহলে তো ছাড়বো না। কারণ আমাদের সাথে তো জনগণ আছে। আমাদের কিছু করা লাগবে না। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠান্ডা করে দেবে।

বিএনপির সোর্স অব মানি কী?
বিএনপির সোর্স অব মানি খোঁজ নেওয়া দরকার বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের তো নিজের খেয়ে নৌকা। আওয়ামী লীগে একটা সুবিধা আছে নিজের খেয়ে নৌকা। কিন্তু তাদের তো সেটা নয়। তারা পাচ্ছে কোত্থেকে।এ বিষয়টি দেখার জন্য তিনি গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ করেন।

পূজায় বিএনপির আন্দোলন নজরদারিতে রাখার আহ্বান
দুর্গাপুজার সময় বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে, এতে কোনও প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূজায় নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট সচেতন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে সচেতনও করে দিয়েছি। বিএনপি ও তাদের জোট কর্মসূচি দিয়েছে। তারা কী করবে! এটা সকলকে একটু নজরদারিকে রাখতে হবে। কারণ ওরা তো ধ্বংস করতে জানে। ওরা তো মানুষের ভালো চায় না। ওরা মানুষ পোড়াতে পারে। মানুষ বাঁচাতে পারে না। এটা হলো বাস্তব কথা। যাহোক এখন আর অতটা পারবে না। এটা আমি নিশ্চিত।

মন্দির ভাঙা, প্যাগোড়া পুড়িয়ে ফেলাসহ বহু অপকর্ম বিএনপি-জামায়াত করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আবার যাতে সেটা করতে না পারে, সে জন্য জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সচেতন থাকতে হবে। যারা যদি দুর্গাপূজার দিকে কোনও দৃষ্টি না দিয়ে আন্দোলন করতে থাকে, তবে পূজার সময় যেন কোনও অপকর্ম না করে; সে জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

স্যাংশন দিয়ে আইনশৃঙ্খলা সংস্থার কাছে চাইবে কেন?
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার জন্য ১৫৮ জন পুলিশ মোতায়েন করা আছে। আর আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রে) রাষ্ট্রদূতের জন্য সিভিল ড্রেসে শুধু একজন গানম্যান দেওয়া আছে। কাজেই এখানে নিরাপত্তার কোনও ঘাটতি নেই। হোলি আর্টিজানের পরে কয়েকটি দেশের দূতাবাসে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনার পর আমাদের দেশে আর কোনও সন্ত্রাসী কর্মকা- হয়নি। আর দীর্ঘদিন এভাবে রাখা…সাথে অন্যান্য অ্যাম্বাসি আছে, তাদেরও চাহিদা ‘ওরা পেলে আমরা পাবো না কেন?’ তা ছাড়া এখন সে রকম কোনও অসুবিধা নাই।

তিনি আরও বলেন, আমাদেরও পুলিশ দরকার এখন সারা বাংলাদেশের জন্য। কাজেই সেটা উইথড্রো করা হয়েছে। আর তার সাথে তো গানম্যান দেওয়া আছে। এ ছাড়া তাদের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা তাদের অ্যাম্বাসির ভেতরেও আছে। এটা নিয়ে বারবার প্রশ্ন হচ্ছে। কিন্তু এর কোনও অর্থ নেই। আমার অ্যাম্বাসেডর তো কোনও নিরাপত্তা পায় না। আর আমেরিকায় তো প্রতিদিনই গুলি হয়। স্কুলে গুলি, শপিং মলে গুলি, বাড়িতে গুলি। শিশুদের মারছে, বাচ্চাদের মারছে। আমরা তো শঙ্কায় থাকি যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের দেশের মানুষকে নিয়ে। এটা তাদের নিজেদের দেশে তো আগে সামাল দেওয়া উচিত। ওইখানে নিরাপত্তার সমস্যা। আমাদের দেশে এই সমস্যাটা তো নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট ভালো কাজ করছে। আর একদিকে আমার আইনশৃঙ্খলা সংস্থার ওপর স্যাংশন দেবে আবার তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাইবে; এটা আবার কেমন কথা! আমি সেই প্রশ্নটাও করেছি।