নিজস্ব প্রতিবেদক »
ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বুধবার (২৪ জুলাই) রাত পৌনে ২টায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাহবুবুল হক দীর্ঘদিন হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
তার মরদেহ বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ভাটারায় মেয়ের বাসায় নেয়া হয়েছে। ঢাকায় বিকালে জানাজা শেষে আজ বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মরহুমের লাশ চট্টগ্রাম নগরের লালখানের নিজ বাসায় আনা হবে।
আগামীকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল দশটা থেকে সাড়ে এগারটা পর্যন্ত মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে রাখা হবে।
এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে নগরীর জামিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে। জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হবে। জানাজা শেষে মরদেহ নেয়া হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করলেও বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে পরিচিতি লাভ রয়েছে ড. মাহবুবুল হকের। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে তার। এ ছাড়া বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন।
প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। গবেষণায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
তার চল্লিশটির বেশি বই প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস ও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও লোকসংস্কৃতি এবং বাংলার লোকসাহিত্য: সমাজ ও সংস্কৃতি প্রভৃতি।