বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া »
পটিয়ায় পাহাড়ের বিশাল এলাকাজুড়ে চাষ করা হচ্ছে পেঁপে, ড্রাগনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল। এ ফল চাষ স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই অন্যান্য চাষাবাদ ছেড়ে ঝুঁকছেন ফল চাষে। উপজেলার পূর্ব হাইদগাঁও পাহাড়ে ২০ হাজার ড্রাগন গাছ লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। যা চলতি বছর ড্রাগন ফল বিক্রি করেই প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করেন এটি আর এগ্রো ফার্মের মালিক নুরুল ইসলাম মাস্টার। আগামী বছর আরো কয়েক হাজার গাছে ফল আসবে, সেগুলো বিক্রি করে কয়েকগুণ বেশি আয় হবে।
রোববার সকালে সরেজমিনে এটি আর এগ্রো ফার্মের ড্রাগন-বাগানে দেখা যায়, জায়গাটি খাড়া ও পাহাড়ি ঢালবিশিষ্ট। সেখানে দুই বছর আগে চার হাজার পিলারে ৪ হাজার ড্রাগন গাছের চারা প্রথমবারের মতো রোপণ করা হয়। আর সেই গাছের চারা থেকে বর্তমানে ফলন মিলছে। এক বছর আগে লাগানো আরো ১২ হাজার ড্রাগন চারায় ফলন আসবে আগামী বছরের জুন-জুলাই মাসে। বাগানটির পরামর্শক ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রূপায়ন চৌধুরীকে ঠিকভাবে যত্ন নিতে দেখা গেছে।
কৃষি অফিস ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ড্রাগন ফল একধরনের ক্যাকটাস গাছের ফল। এ ফলের অন্য নাম পিটাইয়া। চীনে এই ফলের নাম হুয়ো লং গুয়ো, ভিয়েতনামে থানহ লং। ড্রাগন ফলের জন্ম মধ্য আমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়ায় ফলটি প্রবর্তিত হয় বিংশ শতাব্দীর দিকে। বর্তমানে ভিয়েতনামে ফলটি বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল ও অস্ট্রেলিয়াতে চাষ হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়।
এদিকে পটিয়ার পাহাড়ি এলাকায় এটি আর এগ্রো ফার্মের ৩০ একর জায়গাজুড়ে ২০ হাজার ড্রাগন গাছ, তাদের মধ্যে থাই জাতের লাল ও হলুদ রঙের ড্রাগন ছাড়াও থাই জাতের রাম ভুটান গাছ ১০০টি, থাই মাল্টা গাছ ১ হাজার, বারোমাসি কাটিমন আম গাছ ৩০০, থাই পেয়ারা ২০০, আম্রপলি গাছ ৩০০, চিম্বুক জাতের আনারস ২ হাজার, রেড লেডি পেঁপে ১ হাজার, কাজু বাদাম ১০০, শরীফা ১০০, লেবু ৬০০, কলা গাছ ১ হাজার ৭ শ’সহ সাথী ফসল হিসেবে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। প্রথম পর্যায়ে ১৫ বছর পূর্বে এটিআর এগ্রো ফার্মে বয়লার ও লেয়ার মুরগি ফার্ম দিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু লাভজনক না হওয়ায় খামারটির মালিক নুরুল ইসলাম মাস্টার শুরু করেন লাভজনক ড্রাগনসহ সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফলজ চাষের গাছ।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও এটিআর এগ্রো ফামের পরামর্শক রূপায়ন চৌধুরী জানান, ড্রাগন চাষ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পাহাড়ি এবং উঁচু জায়গা ড্রাগন চাষের উপযোগী। বিশ্বে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগ নিবারণে ড্রাগন ফল বেশ উপকারী। এতে ভিটামিন সি’র পরিমাণ খুব বেশি। খেতে সুস্বাদু পুষ্টিকর এ ফলের চাষ ব্যাপকভাবে গড়ে উঠলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ড্রাগন ফল বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
পটিয়ায় প্রথমবারের মতো এটি আর এগ্রো ফার্ম নামে বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠান এ ধরনের চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে তিনটি বারি-৪, বারি-১ ও বারি-১৪ জাতের আম এবং একটি ড্রাগন ফলের বাগান। ২০১৫ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। বর্তমানে পটিয়ায় ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।