২০১৩ সালে চীন থেকে আমদানিকৃত ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেন রেলের বহরে যুক্ত হয়েছিল। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে ২০ সেট (৬০টি কোচ) ডেমু ট্রেন পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে যুক্ত হয়। ২০ সেটের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে চালু করা হয়েছিল ১৮ সেট। শুরুতে পূর্বাঞ্চলে (চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে) চলত ১৮ সেট। পশ্চিমাঞ্চলে চলত ২ সেট।
পশ্চিমাঞ্চলের ২ সেটের মধ্যে এখন আর একটিও চলে না। পূর্বাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে কালিয়াপুর রুটে ১ সেট চলে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ২ সেট চলত। সেটা বন্ধ। ঢাকা-কুমিল্লা, ঢাকা-জয়দেবপুর ও ঢাকা-টঙ্গী রুটে বন্ধ।
আখাউড়া-সিলেট এবং ময়মনসিংহ রুটেও বন্ধ। পূর্বাঞ্চলে ১৮ সেট ডেমুর মধ্যে এখন চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে ১ সেট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ সেট এবং লাকসাম-চাঁদপুর-নোয়াখালী রুটে ১ সেট চলে।
আধুনিক যাত্রীসেবার প্রত্যয় নিয়ে ২০১৩ সালে রেলের বহরে যুক্ত হয় সুসজ্জিত ২০ সেট ডেমু ট্রেন।
সাত বছরের মধ্যে ১৬ সেট অচল হয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে। অবশিষ্ট ৪ সেট খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের চার রুটে। ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা ২০ সেট ডেমু সাত বছরে আয় করেছে মাত্র সাড়ে ২১ কোটি টাকা। আর সাত বছরে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
ডেমু ট্রেনগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও মেরামতের জন্য আলাদা ওয়ার্কশপ সাত বছরেও তৈরি হয়নি। ফলে নষ্ট ডেমুগুলো এখনো পর্যন্ত মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। ডেমু মেরামতে স্পেয়ার পার্টস সংকট তীব্র বলে জানান পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়া পূর্বাঞ্চলে চলাচলরত ৪ সেট ডেমু প্রায় সময় যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়ে। তাই ডেমুর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা পত্রিকাকে বলেছেন, ডেমু ট্রেনগুলো মেরামতে বিশেষায়িত ওয়ার্কশপের প্রয়োজন। অন্যদিকে রেলের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, ডেমু ট্রেন খাতে রেল কর্তৃপক্ষের আয়ের চেয়ে লোকসানের পরিমাণ অনেক বেশি।
শুরু থেকে ডেমু ট্রেন নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছিল। চীনের তৈরি এই ট্রেনগুলোর মান নিয়ে শুরু থেকে আপত্তি জানিয়েছিলেন অনেকে। এছাড়া এইসব ট্রেনের বগি নিয়েও যাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ ছিল। এইসব বগিতে টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না, অতিরিক্ত গরমের কারণে এই ট্রেনে যাতায়াত করাও ছিল কষ্টসাধ্য। মাত্র সাত বছরে অচল হয়ে পড়ায় বোঝা যাচ্ছে শুরুতে এর মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল তা সঠিকই ছিল।
এখন বোঝা যাচ্ছে এমন ট্রেন রেলবহরে যুক্ত করা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। আর এই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনোপ্রকার দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত এবং তেমন কিছু ঘটে থাকলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মতামত সম্পাদকীয়