ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা দরকার

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসের ১৭ দিনেই সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। সাত জনের মধ্যে পাঁচজনই নারী। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয় ৩১১ জন। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার মারা যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা মহিলার নাম উম্মে হানি আকতার (২২)। ওই নারী ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিনি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির গুইমারার বাসিন্দা। স্বামীর সঙ্গে নগরের লাভ লেইন এলাকায় বসবাস করতেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন।সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়- ‘এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম’।
অন্যদিকে গত সোমবার একদিনে চট্টগ্রামে ২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ৯ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৪ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১২ জন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ১৫ জন নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০৪। এ ছাড়া মারা যায় দু’জন। আগস্টে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজারে এবং ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত আট মাসে ৮৬ জন মারা গেছে এবং ১৩ হাজার ৩১৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এটাই উঠে এসেছে যে, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও ধামাচাপা পড়ে যায় ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। তারা জানিয়েছেন, প্রস্তুতি না থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি বাড়ানো, পর্যাপ্ত শনাক্তকরণ কিট ও আইভি ফ্লুইড সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। জুলাই মাসে ২৫০ শয্যার সরকারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩১৩ জন ডেঙ্গু রোগী। আর গত আগস্ট মাসে ভর্তি ছিলেন ৯৯৯ জন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে তিন গুণের বেশি। গত তিন মাসের পরিসংখ্যান হিসাব করলে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩২ গুণের বেশি।
চিকিৎসকেরা জানান, গত আগস্ট মাসজুড়ে ভারী বর্ষণের কারণে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া ডেঙ্গুর মৌসুমও শুরু হয়েছে। এ কারণে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। জ্বর আমলে না নেওয়াতেই মৃত্যু বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রচলিত কিটে চারটি ধরণ শনাক্ত না হওয়ায় ডেঙ্গু পরীক্ষায় ফলস নেগেটিভ ফলাফল আসছে, এতে জটিলতায় পড়ছেন আক্রান্তরা।