ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এ পর্যন্ত ৫১ হাজার ৮৩২ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে কেবল জুলাই মাসেই ৪৩ হাজার ৮৫৪ রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এ বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ২৫১ জনের মধ্যে ২০৪ জনেরই মৃত্যু হয়েছে চলতি জুলাই মাসে। একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২,৬৯৪ রোগী। এদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়াল।
সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ২৫০ ছাড়িয়ে গেল। বাংলাদেশে এর আগে কেবল ২০১৯ ও ২০২২ সালে এর চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আর ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গুতে যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, মাসের হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৫২ হাজার ৬৩৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে বছর সারাদেশে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
চট্টগ্রামে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে শুধু জুলাই মাসেই এই রোগে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৩১১ জন। যা এ বছর মোট আক্রান্তের ৮৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ মাসেই সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২৫ জনের মধ্যে জুলাই মাসেই মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। এই হিসেবে গেল মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে বেশি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তা বোধহয় বিশদ ব্যাখ্যার দাবি রাখে না। এই রোগের বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না; না ঢাকায়, না চট্টগ্রামে। যদিও এখন সারা দেশেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এরমধ্যে সামান্য সুখবর হলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০ শয্যার একটি আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হচ্ছে। হাসপাতালের নতুন ভবনের ৮ম তলায় কার্ডিয়াক বিভাগের পেছনে এ ওয়ার্ড করা হবে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীদের সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকছে হাসপাতালে। আগস্টে রোগী আরও বাড়তে পারে। হাসপাতালে এতদিন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডগুলোতে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হতো।
এটা গেল আক্রান্ত হওয়ার পরের ব্যবস্থা। সমস্যা হলো যে হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে অচিরেই চিকিৎসাসংকট দেখা দেবে। দেশের সবক’টি হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। এরজন্য ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হবে সহজ কাজ। এর জন্য মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন সক্রিয় হলে হবে না। সরকারের অন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকেও যুক্ত করতে হবে। যুক্ত করতে হবে শিক্ষার্থী, সমাজের বিশিষ্টজন, মসজিদের ঈমাম বা ধর্মীয় নেতা এবং সামাজিক সংগঠনসমূহকে যারা কিছু বললে মানুষ গুরুত্ব দেবে।
অর্থাৎ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না চালালে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব হবে না।