দেশে এখন একদিকে করোনা অন্যদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ জনজীবনকে বিপর্যকর করে তুলছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০। বয়স বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এ বয়সীদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২৩৬ জন। বয়স বিবেচনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যানে তৃতীয় অবস্থানে শিশুরা। শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী আক্রান্তদের সংখ্যা ২ হাজার ৯। এছাড়া ৪৬ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১ হাজার ২২৭, ৬১ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ৪৩৯, ৭৬ থেকে ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৭২ জন আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে।
আবার মৃত্যু বেশি চল্লিশোর্ধ্বদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মোবিলিটি বেশি থাকার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়ছে। অন্যদিকে বয়স্কদের বেশির ভাগের শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাওয়ার কারণে আক্রান্তের প্রবণতা কম।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে দেশে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৪১ জন। গত একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৬২ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনুপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুব সিদ্দিকি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে আসছি ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। একবার এক ধরনে আক্রান্ত হলে ওই ধরনের অ্যান্ডিবডি শরীরে তৈরি হয়ে যায়। যাদের বয়স বেশি তারা কোনো না কোনো সময় তিন বা চারটি ধরনেই আক্রান্ত হয়ে যায়। ফলে তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের প্রবণতা কম দেখতে পাই। অন্যদিকে তরুণরা যেহেতু ভাইরাসের সব ধরনে এখনো আক্রান্ত হয়ে ওঠেনি, ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।’
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী মানুষজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। এটা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য চিন্তার বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের মোবিলিটি বেশি তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটার সহজ হিসাব হলো একজন কর্মক্ষম মানুষ কাজের উদ্দেশে বাসা থেকে অফিসসহ বিভিন্ন এলাকায় যায়। যে কারণে তাদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি।
আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া মানে শুধু যে চিকিৎসা ব্যয় বাবদ অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, কর্মঘণ্টা ও কর্মস্পৃহাও নষ্ট হচ্ছে। এদিকে দ্রুত নজর না দিলে বিপুল জাতীয় ক্ষতিকে এড়ানো সম্ভব হবে না।
এ মুহূর্তের সংবাদ