ডেঙ্গু

আকিব শিকদার

ট্রেনে বড় ভাইটার সাথে পরিচয়। জানলাম তার সহকর্মীর সাথে প্রেম। সাত-আট বছরের সম্পর্ক। বাসা থেকে পরস্পরের সাথেই বিয়ে ঠিক। দিন নির্ধারণ করে অফিসের সবাইকে কার্ড দিয়ে দাওয়াত দিলো। বিয়ের কেনাকাটা চলছে। গুগল থেকে পছন্দসই পণ্যের ছবি ডাউনলোড করছে। ইউটিউব থেকে দিচ্ছে অলংকারের স্ক্রিনশট। কোন দোকানের শাড়ি সুন্দর? কোথায় আছে ভালো লেহেঙ্গা? হীরার নাকফুলের দাম কমেছে জেনে আনন্দ। বিয়ের কার্ডে নামের বানান ভুল নিয়ে আফসোস, কষ্ট। শ্বশুর-শাশুড়ি হবু বউয়ের জন্য জুতা কিনতে গিয়ে এলিফ্যান্ট রোডের সবকটি দোকান ঘেঁটেও মনোমতো জুতা পেল না।
হঠাৎ ডেঙ্গু। বিয়ের ছয়দিন আগে কনে হাসপাতালে ভর্তি। শরীরে প্লাটিলেট কমে গেছে। ব্লাড দেওয়া লাগবে। ও নেগেটিভ রক্ত। স্বামী-স্ত্রী দুজনের একই গ্রুপের রক্ত হলে বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়, এই কথা বলে সহকর্মীরা ভয় দেখাতো। আজ মনে হলো দুজনের রক্ত এক হওয়াটাই ভালো হয়েছে। রক্ত দেওয়ার পর সুস্থ হলো।
গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে। ককশিটে লেখা ‘শানীলার হলুদসন্ধ্যা’। বিয়ের গান বাজছে। কন্যা বসলো আসরে। গাঁদাফুলের সাথে হলুদ মিশিয়ে গায়ে মাখা হল। অনেক ছবি উঠল চমৎকার-চমৎকার। একটা ছবি আতশবাজির চক্রে তারাবাতি পোড়ানোর। একটা ছবি আত্মীয়দের সাথে ফানুস ওড়ানোর। মাঝরাতে হঠাৎ জ্বর আবার বেড়েছে। খিঁচুনি দিয়ে অজ্ঞান। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তোলা হলো। পথে মৃত্যু। পরদিন বিয়ে খেতে এসে আত্মীয়রা জানাজা পড়ে গেল।
ছেলের বাড়িতে বাসর ঘর সাজানো। অথচ মেয়ে কবরে কালো অন্ধকারে। ফুলে ফুলে ঝুলে আছে এক অপ্রাপ্তির বেদনা। ছেলেটার ইচ্ছে হলো না নিজের ঘরে যেতে। কবরের পাশে সে জেগে থেকে কাটিয়ে দিল রাত। একাকী।