সুপ্রভাত ডেস্ক »
ব্রিটেনের রাজনীতিতে খুব একটা স্বস্তি নেই। অভ্যন্তরীণ চাপে হুটহাট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দেশটির নাগরিকদের কাছে উদ্বেগের কারণ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ৭ জুলাই পদত্যাগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার একই পথে হাঁটতে বাধ্য হন লিজ ট্রাস। অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতাদের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন তিনি। প্রশ্ন হচ্ছে, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের হাল ধরছেন কে? এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের গ-ি ছাড়িয়ে আলোচনা এখন সর্বত্র। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
পদত্যাগের ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস উল্লেখ করেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন নেতৃত্বের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন তিনি। তিনি বলেন, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরনের অস্থিরতার সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে নিয়েছিলেন। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদে এসেছিলেন, তা পূরণ করতে পারছেন না তিনি।
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবং বিরোধী লেবার পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য লড়বেন কারা তা এখনও ঘোষণা আসেনি। তবে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং দেশটির আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বেশ কয়েকজনের নাম সামনে এনেছে, যাদের ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই লিজ ট্রাসের উত্তরসূরি নির্ধারণ হয়ে যাবে বলে শোনা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থীকে কমপক্ষে ১০০ সহকর্মী টরি পার্লামেন্ট সদস্যদের (আইনপ্রণেতা) সমর্থন পেতে হবে পার্লামেন্টে। বর্তমানে টরি এমপির সদস্য সংখ্যা ৩৫৭ জন। প্রধানমন্ত্রীর পদে লড়াইয়ে সেক্ষেত্রে তিন জনের বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাচ্ছেন না। সাধারণত প্রার্থীর সংখ্যা দুজন বা একজন হলে দলীয় সদস্যদের ভোট ছাড়াই তিনি নেতা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেননি কেউ।
রিশি সুনাক
বরিস জনসন যখন ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দেন তখন রিশি সুনাক তার জায়গা নিতে প্রতিযোগিতায় নামেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনসন সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান তিনি। সে সময় তিনি সতর্ক করেছিলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বীর (লিজ ট্রাস) কর বা ট্যাক্স পরিকল্পনা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে একটা বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনবে। আসলে এই সতর্ক বার্তাটি পার্টির অন্য সদস্যদের কাছে ঠিকঠাকভাবে তুলে ধরতে পারেননি এবং বোঝাতে ব্যর্থ হন তিনি। ফলশ্রুতিতে লিজ ট্রাসের কাছে ২১ হাজার ভোটে হেরে যান রিশি সুনাক।
সাজিদ জাভেদের পদত্যাগের পর বরিস জনসন সরকারের অর্থমন্ত্রীর পদে দায়িত্ব পান রিশি সুনাক। করোনা মহামারিতে লকডাউনের সময় বেশ ভালোভাবেই ব্রিটেনের অর্থনীতির বিষয়টা সামলে নিয়েছিলেন তিনি। এবারের লড়াইয়ে তাকে সামনের দিকেই দেখা যেতে পারে।
পেনি মরডেন্ট
যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিক পেনি মরডেন্ট জনসনের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে ট্রাস ও সুনাকের পর তৃতীয় স্থানে গিয়ে প্রচেষ্টার সমাপ্তি ঘটে। হাউজ অব কমন্সের নেতা হিসেবে টরির আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। লিজ ট্রাসকে সমর্থনের পর তিনি হাউজ অব কমন্সের নেতা এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন।
২০১৯ সালে প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে ব্রিটেনে ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি। এবার তাকেও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বরিস জনসন
ডাউনিং স্ট্রিটের নতুন নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এই প্রতিযোগীদের মধ্যে পরিচিত অনেক মুখ দেখা যেতে পারে। এরমধ্যে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ছিলেন তার নামও আসছে। তিনি বরিস জনসন। করোনার সময় স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ ভেঙে ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি আয়োজন করে তোপের মুখে গত জুলাইয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে তার পক্ষে এখনও জনগণের আস্থা এবং পার্লামেন্টে বেশ সমর্থন রয়েছে। সে হিসেবে তাকে ফের ডাউনিং স্ট্রিটে দেখা যেতেই পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। এ নিয়ে শুক্রবার সকালে প্রকাশ হওয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতেও তাকে শিরোনামে দেখা গেছে।
বেন ওয়ালেস
টরি নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভক্তি থাকলেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেল ওয়ালেসকে নিরাপদ হিসেবে দেখেন অনেক এমপি। কারণ, ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যেভাবে কিয়েভকে সমর্থন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন তাতে পশ্চিমা দুনিয়ায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি।
তবে ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করলেও বরিস জনসনের শক্ত সমর্থক ছিলেন তিনি। পুরস্কার হিসেবে ২০১৯ সালে জনসন সরকারের মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সুয়েলা ব্রেভারম্যান
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার পার না হতেই নিজ দলীয় এমপিদের চাপের মুখে ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে এসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ট্রাস। ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তার মতো একজনকে হারানোয় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অশান্তি বাড়াবে। কারণ, ট্রাস নিজ দলের এমপিদেরই ব্যাপক অসন্তোষের মুখে পড়েন। আর এটিই শেষমেশ বাস্তবে রূপ নিলো। এমন বাস্তবতায় সুয়েলাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে একজন শক্ত প্রতিন্দ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাসের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন তার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী যিনিই আসুক কেন, করোনা পরবর্তী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে, তা তিনি কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন তা-ই দেখার বিষয়। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা।