২০১৭ সালে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীতে যানজট ও তার বিরূপ প্রভাব’ শীর্ষক চট্টগ্রাাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের এক প্রতিবেদনে নগরে যানজটের ১৬টি কারণ উল্লেখ করেছিল। তার অন্যতম হচ্ছে রাস্তার মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা, সড়কে বিভিন্ন গতির ও অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, আইন প্রয়োগ ও কার্যকরের অভাব, অপর্যাপ্ত ও অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের অভাব, সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক, রাস্তা ও ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া।
ওই গবেষণায় জানানো হয়েছিল, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড়ের দূরত্ব ৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। শহর এলাকায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি (ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার) অনুযায়ী, এ পথ পাড়ি দিতে সর্বোচ্চ ১২ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু লাগছে গড়ে কমপক্ষে ২৭ মিনিট। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগার কারণ যানজট। যানজটের কারণে শহরে গাড়ির গতি কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারে।
এটি সাত বছর আগের একটি প্রতিবেদন হলেও পরিস্থিতির সামান্য পরিবর্তন ঘটেনি। যেসব কারণ তারা চিহ্নিত করেছিলেন তারও কোনো উন্নতি ঘটেনি।
সুপ্রভাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আনুমানিক ৭০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫ লাখের বেশি যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচল করে। ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ-র মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি সুশৃংখল সড়ক ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় নগর যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোটাই এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বলা যায়। একইসঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ভারী হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
প্রতিবেদনে এখনো বলা হয়েছে, সড়কে বাস-ট্রাক, সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশার এলোমেলো, বেসামাল চলাচল, যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখল, সড়কে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, অপরিকল্পিভাবে রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ করা, দিনের বেলায় সড়কে ট্রাক চলাচল ইত্যাদি যানজটের অন্যতম কারণ বলে বলে বিবেচনা করা হয়।
এরমধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সড়কে এখনো কোনো নিয়মশৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। যার যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে চলছে। কয়েকবছর ধরে আরেক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। নিয়ন্ত্রণহীন এসব যানবাহন চালাচ্ছে অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রশিক্ষণহীন চালকেরা।
এভাবে একটি আধুনিক নগর চলতে পারে না। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।