চট্টগ্রাম হয়ে ভারতের পণ্য যাচ্ছে ত্রিপুরা ও আসামে#
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ট্রানশিপমেন্টের আওতায় ত্রিপুরা, আসামের পণ্য এলো চট্টগ্রাম বন্দরে। উপকূলীয় জাহাজ ‘সেঁজুতি’ ভারতের কোলকাতা বন্দর থেকে ২২১ কনটেইনার পণ্য নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছে। এসব পণ্যের মধ্যে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের রয়েছে ১১৭ কনটেইনার ও চারটি কনটেইনারে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যের। এই চার কনটেইনারের মধ্যে দুই কনটেইনারে লোহার বার ও অপর দুই কনটেইনারে ডাল জাতীয় পণ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রড যাবে ভারতের ত্রিপুরা এবং ডাল যাবে আসামে।
মঙ্গলবার রাতেই এসব পণ্য সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলা হয়ে যাওয়ার কথা। পরীক্ষামূলকভাবে এই চার কনটেইনার পণ্য পাঠানো যদি সফল হয় তাহলে আগামীতে এই রুটে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে পণ্য পাঠাবে ভারত। কারণ কোলকাতা থেকে আগরতলা সড়কপথের দূরত্ব ১৬শ কিলোমিটার; সময় লাগে ৩ দিন। কিন্তু চুক্তির অধীনে চট্টগ্রাম রুট ব্যবহার করলে সময়ও কম লাগবে; অর্থও সাশ্রয় হবে। অর্থাৎ কলকাতা থেকে ভারতের ওই সাত রাজ্যে দ্রুত ও সাশ্রয়ে পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম ও মোঙলা বন্দর ব্যবহার ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য ২০১৮ সালে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এনিয়ে এসওপি স্বাক্ষর হয়। নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০২০ সালের মার্চে পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন শুরুর দিন ঠিক হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সেটি পিছিয়ে এখন শুরু হলো।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নতুন এই রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। একইসাথে আমাদের দেশের মানুষও লাভবান হবে। ভারত থেকে অনেক পণ্য আমদানি হয়। এই রুটের কারণে সময় ও অর্থ উভয়ই খরচ কম হবে। একইসাথে ভারতও তাদের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠাতে পারবে।‘
তিনি আরো বলেন, এতে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যেমন অনেক ধরনের ফি পাবো তেমনিভাবে আমাদের দেশের অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
ভারতের জাহাজকে বার্থিং এ কোনো অগ্রাধিকার দেয়া হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, মোটেও না। স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য জাহাজ যেভাবে আমাদের জেটিতে ভিড়ে এগুলোও ভিড়বে। এখানে অগ্রাধিকারের কোনো বিষয় নেই।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক জেনারেল এগ্রিমেন্ট অফ ট্যারিফ এন্ড ট্রেড (গ্যাট) চুক্তি অনুযায়ী, ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য পরিবহনে সরাসরি শুল্ক আরোপের সুযোগ নেই। তবে দেশের অবকাঠামো ব্যবহার, নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ পণ্য পরিবহন সেবা দিয়ে বিভিন্ন মাশুল আরোপের সুযোগ আছে। বন্দর ও কাস্টমস ব্যবহার করতে দিয়ে সরকার সেই মাশুলই আরোপ করবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ১৩ জুলাই এক আদেশে ভারতীয় ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্টের ‘পরীক্ষামূলক পণ্য চালানের’ জন্য মাশুল নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই সাতটি মাশুলহলো প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা প্রতি টন, এসকর্ট মাশুল প্রতি টন ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাশুল প্রতি টন ১০০ টাকা। এ ছাড়া স্ক্যানিং ফি (প্রতি কনটেইনার) ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিলের মাশুল প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য উঠানামা মাশুল, রিভার ডিউজ, পোর্ট ডিউজ আদায় করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টমস-এই দুই সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ট্রানজিট পণ্য বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহারের জন্য সরকার নির্ধারিত টোল ও মাশুল আদায় করবে সরকারি আরেক প্রতিষ্ঠান সড়ক বিভাগ। যদিও পরীক্ষামূলক চালানের ক্ষেত্রে সড়ক ব্যবহারের টোল আদায় বহাল রাখলেও অন্য মাশুল সাময়িকভাবে মওকুফ করে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। উক্ত তিন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাশুল ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যচালানটি সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে বাংলাদেশি ট্রাক ট্র্রেইলর ব্যবহার করবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক কন্টেইনার পণ্য আখাউড়া হয়ে ভারতের আগরতলা পৌঁছতে ট্রেইলর ভাড়া পাবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পাবেন। সেই সাথে পণ্য চালান কাস্টমস, বন্দরে ছাড়ের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকায় বাংলাদেশি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি আয়ের সুযোগ পাবেন।
ব্যবসায়ীদের মতে, এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। ভারত যেমন কম সময়ে ও কম খরচে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে পণ্য পাঠাতে পারবে তেমনিভাবে বিভিন্ন মাশুল পাওয়া যাবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ