টেলিকম সিন্ডিকেটে অর্থ লোপাট: ৬২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আইওএফ চক্র

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক কল পরিচালনায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরদের ব্যবসা কুক্ষিগত করেন সালমান এফ রহমান। গড়ে তোলেন আইজিডব্লিউ ফোরাম (আইওএফ) নামে দুর্ভেদ্য এক সিন্ডিকেট।

কল বণ্টনে অনিয়ম, প্রকৃত দর গোপন করে সরকারের বিপুল রাজস্ব ফাঁকির নেপথ্যে ছিল এই আইওএফ চক্র, আর হাতিয়ে নেয় ৬২৫ কোটি টাকা।

যদিও এই খাতে শৃঙ্খলা আনার জন্য একসময় আইওএফ গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের কার্যক্রমই অস্বচ্ছ।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বললেন, গেটওয়ে পুরো টাকাটা সংগ্রহ করে। সংগ্রহ করে বাকিদেরকে ভাগ করে দেয়। এই জায়গায় একসময় বিশৃঙ্খলা ছিল। এখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যই অ্যারেঞ্জমেন্টগুলো করা হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে ফাঁক রয়ে যায়।

সালমান এফ রহমানের কড়া অনুশাসনে আইজিডব্লিউ অপারেটরদেরকে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠাতে হতো তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো কম্পিউটার্স লিমিটেডে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের নেই আইজিডব্লিউ পরিচালনার লাইসেন্স। মার্কেট ডেভেলপমেন্টের নামে টাকা আদায় করলেও তা কোথায় ব্যবহার হয়েছে, তা জানেন না আইজিডব্লিউ অপারেটরা।

আইওএফ এর বর্তমান সভাপতি আসিফ সিরাজ বলেছেন, যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ গিয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সেটা বলতে পারবে। আমরা তো এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। এখানে বলা হতো অবৈধ ভিআইপি রোধ করার জন্য খরচ আছে, যা আলাদাভাবে নেয়া হতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তো সেই খরচগুলো আর আমরা রাখছি না।

রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গত ১৬ বছরে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স হাতিয়ে নেন একাধিক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। সরকারের রাজস্ব ও মোবাইল অপারেটরদের বিপুল পরিমাণ ন্যায্য হিস্যা আদায় না করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেন তারা।

তার মধ্যেই দৃশ্যপটে নতুন করে ছক কষেন শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। মোবাইল অপারটদের বকেয়া পরিশোধ, অবৈধ ভিওইপি বন্ধে উদ্যোগ এমন সব দায় নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে আইওএফ গঠনের অনুমোদন করিয়ে নেন তিনি।

এরপর আন্তর্জাতিক কল থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৪ শতাংশ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে গড়ে তোলা হয় মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড। মোবাইল অপারেটররা বলছেন, এই ফান্ড থেকে তাদের প্রাপ্য বকেয়ার ৩২০ কোটি টাকার মধ্যে কোনো অর্থই পরিশোধ করা হয়নি।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছিল এই টাকার একটা অংশ আমাদেরকে দেয়া হবে, যাতে আমরা লোকসান না করি এবং সেই কারণেই আইওএফ তৈরির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি উদ্দেশ্যের সাথে আসলে এর কোনো মিল নেই এবং সম্পূর্ণ একটা অস্বচ্ছ প্ল্যাটফর্ম নাম দিয়ে এটাকে কন্টিনিউ করা হয়েছে, যেটা এখনো কন্টিনিউ আছে। তাই এটা আমাদের কাছে খুব আশ্চর্যের বিষয় যে এটা কীভাবে এখনো কন্টিনিউ করে।

বর্তমানে এই তহবিলে পড়ে আছে ৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বিপুল পরিমাণ টাকা একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যায় করার বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব আছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসির কমিশন সভা। তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।