হুমাইরা তাজরিন »
জীবনের বাঁকে বাঁকে এমন অনেককিছুই থাকে যা আমাদের বিপর্যস্ত করে। প্রাণখুলে হাসা তো দূরের কথা, স্বস্তিতে শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই দমবন্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা হাঁসফাঁস করতে থাকি। তখনিই আমাদের প্রয়োজন হয় নির্মল আনন্দের। ভবঘুরে জীবন কখনও সেই দমবন্ধ জীবন থেকে মুক্তি খুঁজে। শুধু টিভি দেখাকেই নির্মল আনন্দ মনে হলো দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে আবু তালেব ভাসানীর। বর্তমানে তিনি নগরীর জিইসি এলাকায় ভবঘুরে জীবন যাপন করছেন। ভালোবাসেন বিভিন্ন টিভি শোরুমের সামনে টিভি দেখতে।
আবু তালেব বলেন, ‘আমার টিভি দেখতে ভালো লাগে। যেসব চ্যানেলে খেলাধূলা দেখায় সেসব চ্যানেল দেখতেই ভালো লাগে। কারণ টিভি দেখলে সময় কাটে। যতক্ষণ চলে দেখি, বন্ধ হয়ে গেলে চলে যাই।’
আবু তালেব ভাসানী জানালেন তার পিতার নাম মীর আহম্মদ ভাসানী। মায়ের নাম হাজেরা খাতুন। বাড়ি পটিয়া থানায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে একজন আবু ছালেক, আরেক জন আবুল কালাম। দুজনই দেশের বাইরে থাকেন। লেখাপড়া বেশি করেন নি। তিনি জানান, সম্পত্তি আত্মসাৎ করতেই বাড়ির আশেপাশের কিছু মানুষ তাকে ডেকে নিয়ে কিছু খাইয়ে দেয়ার পর থেকেই তিনি ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকেন। তার একটা বাড়ি, কিছু জমিজমা, একটি পুকুর ও একটি বড় মুদির দোকান ছিলো। কালুরঘাটে তিনি মুদির দোকানের ব্যবসাও করতেন। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে এসবকিছুও হারাতে থাকেন। এমনকি স্বজনদেরও সঙ্গেও তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আর বিয়েও করা হয়নি আবু তালেবের। সব হারিয়ে রাস্তায় নেমে আসা মানুষকেই তিনি আপন করে নিলেন।
আশপাশের লোকজনের ভাষ্য, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জিইসি সড়কের পাশের ইলেকট্রনিক্সের দোকানগুলোর বাইরে কখনও বসে কখনওবা দাঁড়িয়ে কিংবা কখনো শুয়ে তিনি টিভি দেখেন। কেউ টাকা পয়সা দিতে চাইলেও সচরাচর তিনি নিতে চাননা।
জিইসি এলাকার ইলেকট্রনিক্স এর দোকান ‘এসক্যোয়ার ইলেট্রনিক্স লিমিটেড’ এর ভ্যানচালক রফিকুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘আমার বাড়ি এই শহরেই, কাজীর দেউড়ি এলাকায়। আমি ১৯৯১ সাল থেকে উনাকে দেখছি। উনি অনেক সুন্দর ছিলেন। মাথায় ছিলো ঝাঁকড়া চুল। গায়ের রঙ ছিলো উজ্জ্বল র্ফসা। আমাদের দোকানের মালিক বলেছেন, উনি এখানে বসলে কেউ যেন তাকে অসুবিধে না করে। সবাই উনাকে ‘মামু’ নামেই ডাকেন। টিভি চলতে থাকলে তিনি এসে টিভি দেখেন, টিভি বন্ধ হলে চলে যান। যে দোকানে টিভি চলে সেখানেই তিনি টিভি দেখেন। ’