করোনা মহামারি
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় দেশে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলছে, যা চলতি মাসজুড়ে বলবৎ থাকবে। এর মধ্যেই মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ভারত-সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছিল। এর মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবানগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছিল। স্বাস্থ্যঅধিদপ্তর বলছে, ঢাকার আশপাশেও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণের আরেকটি ঢেউ দেশে আসার আশংকা তারা কেউ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত দেড় মাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে একদিনে ২৪ জন মারা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন মতে, গত শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জনের মৃত্যুসহ দেশে এখন মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৬৬ জনে। এদিকে চট্টগ্রামেও শনাক্তের হার ১৬.০২ শতাংশ স্পর্শ করেছে। গত শুক্রবার ১৫৭ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় ওই ১৬.০২ শতাংশের পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্ত ১৫৭ জনসহ চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৮৪৫ জনে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তদের মাঝে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনাভাইরাস নানা উপসর্গ ও নামধারণ করে খুব দ্রুততার সঙ্গে তার সংক্রমণ ও সংহারমূর্তির বিস্তার ঘটিয়ে চললেও মানুষের মধ্যে তেমন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা সচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না, এ এক ভাবনার বিষয় বটে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সকল মহল থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে সেই কবে থেকে। প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও এমন আবেদন ও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হলেও এসব বিধিনিষেধের খুব সামান্যই মান্য করা হচ্ছে জনস্তরে। ঘর থেকে অপ্রয়োজনে বের হওয়া ঠেকাতে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের সচেতনতার কোনো বিকল্প না-থাকলেও বিষয়টির মূল মনস্তত্ব হচ্ছে রোজগারের আশায় সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে বেরোতেই হচ্ছে। এ কারণে শত বিধিনিষেধেও কাজ হচ্ছে না বলে নিশ্চিত ধরে নেওয়া যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টমহলের গভীরভারে ভেবে দেখার আবশ্যকতা এড়ানো যাবে না। আশার বিষয় হচ্ছে এই যে, দেশব্যাপী চীনের সিনোফার্মের করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি জায়গায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজও দেওয়া চলছে। সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকাপ্রাপ্তির প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। আমরা একটি করোনামুক্ত বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছি। টিকাদানের বিষয়টি ত্বরান্বিত হলে মানুষও আশান্বিত হবে। শংকার গহ্বর থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবে।