১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। যার গড় প্রশস্ততা মাত্র ১৮ ফুট। দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে সড়কপথে যাতায়াতে এই মহাসড়ক ব্যবহার করতে হয়। অপ্রশস্ত এই মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে গাড়ির জটলা। বসে বাজার। যানজটের কারণে এই পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।
এই সড়কে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। তবে ধীর গতির গাড়ি চলার কারণে উচ্চ গতির যানবাহন নির্দিষ্ট গতিসীমায় চলাচল করতে পারে না। মহাসড়কের প্রশস্ততা কম হওয়ায় সড়কটিতে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে। যানজটের কারণে গন্তব্যে যেতে মানুষের সময়ও বেশি লাগে। টানেল হলে এই চাপ আরও বেড়ে যাবে। আবার কক্সবাজারে সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ শিল্পায়নের প্রসারে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এগুলো পুরোদমে চালু হলে বিদ্যমান সড়ক চাপ নিতে পারবে না।
টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন। কিন্তু অপ্রশস্ত সড়কের কারণে এই উদ্দেশ্য পুরোপুরি সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন করেছে একটি জাতীয় দৈনিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম যোগাযোগ পথ (টানেল) দিয়ে যান চলাচল আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে টানেলের পূর্তকাজ শেষ হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে টোলের হারও। তবে টানেল ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার যে স্বপ্ন, তা হোঁচট খেতে পারে অপ্রশস্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কারণে।
ভবিষ্যতে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর চালু হলে এই মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের পরিমাণ বাড়বে। কিন্তু বর্তমানে মহাসড়কটির প্রশস্ততা গড়ে মাত্র ১৮ ফুট। টানেল চালু হলে গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে। তখন এই অপ্রশস্ত মহাসড়কটি চাপ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহনবিশেষজ্ঞরা।
ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আসা কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী গাড়ি চট্টগ্রাম টোল রোড ও চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে পতেঙ্গা দিয়ে টানেলে প্রবেশ করবে। সংযোগ সড়ক হয়ে এসব গাড়ি প্রথমে আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনীতে সংযুক্ত হবে। এরপর গাড়িগুলো চলে যাবে পিএবি সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ওয়াই জংশনে। টানেলের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হলেও পিএবি সড়কের চাতরী চৌমুহনী মোড় থেকে আসা গাড়িগুলো শিকলবাহা ওয়াই জংশনে এসে মিশবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে। কিন্তু সেই মহাসড়ক এখনো দুই লেনের।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চালু হতে পারে। আর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরসহ সারা দেশের কারখানার পণ্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে আনা-নেওয়া করা যাবে। তখন প্রচুর পরিমাণ ভারী গাড়ি এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করবে।
আশার কথা হচ্ছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে যাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার বিকল্প নেই।
এ মুহূর্তের সংবাদ