টাইফয়েডের টিকা নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ করুন

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচিটি সফলের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহায়তায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআাই) নেতৃত্বে দেশব্যাপী শিশুদের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বে অষ্টম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ ধরনের ক্যাম্পেইন চালু করল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ভারতের বায়োলজিক্যাল ই কোম্পানির তৈরি টিকাটি সরকার পেয়েছে গ্যাভির কাছ থেকে। এর আগে পাকিস্তান, নেপালসহ নানা দেশে শিশুদের এ টিকা দেওয়া হয়।
এই টিকাদান শুরুর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে শহরুগ্রামে পারিবারিক আড্ডা কিংবা আলোচনায় তা উঠে আসে আলোচনায়। এর মধ্যে গুজব ছড়ানোয় অনেক অভিভাবক দোটানায় রয়েছেন সন্তানদের এই টিকা দেওয়াবেন কি না? সামাজিক মাধ্যমে টিকাবিরোধী বা টিকা না নিতে উদ্বুদ্ধ করে এক ধরনের প্রচারও কারও কারও দৃষ্টিতে এসেছে।
এই টিকা নিলে মেয়েরা ভবিষ্যতে মা হতে পারবে না, ছেলেশিশুরা হারাবে পুরুষত্ব, এই টিকার পেছনে বৈশ্বিক বাণিজ্যের খেলা আছে, বাংলাদেশ গরিব দেশ বলে শিশুদের গিনিপিগ বানানো হচ্ছে—এমন সব গুজবে অভিভাবকেরা পড়েছেন বিভ্রান্তিতে। ১২ অক্টোবর টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর বলেছিলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষিত ও অনুমোদিত এ টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। বাংলাদেশে এ টিকা পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এটি প্রোটিন ও শর্করা উপাদানে গঠিত, যা শরীরে দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে। এতে শরিয়ত নিষিদ্ধ কোনো উপকরণ নেই।’
দেশে ২০২১ সালে ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৮ হাজার, এদের ৬৮ শতাংশ ছিল শিশু।
টাইফয়েডের এই টিকা সৌদি হালাল সেন্টারের হালাল সনদপ্রাপ্ত জানিয়ে কোনো ধরনের গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
টিকা না ভ্যাকসিন নিয়ে সবসময় অপপ্রচার হয়েছে। ৬০/৭০ দশকে যখন স্কুলে স্কুলে গিয়ে টিকা দেওয়া হতো সে সময়েও তার বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হতো। এমনকি কভিডের টিকা নিয়েও প্রচুর নেতিবাচক কথা বলা হয়েছে যা সত্য নয়। টিকা নেওয়া সচেতনতার অংশ। টাইফয়েডের টিকা নিলে শিশুদের মৃত্যুহার কমবে। এ কথাগুলো সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্য ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। গণমাধ্যমে টিকার বিষয়ে প্রকৃত সত্যটি তুলে ধরতে হবে। প্রয়োজনে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী বা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচি সফল হবে।