কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, টপ সয়েল (মাটির উপরিভাগ) হলো জমির উৎকৃষ্ট প্রাণ। জমির ওপরের ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটিকে সাধারণত উর্বর অংশ (টপ সয়েল) বলা হয়। মূলত ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। ফসল উৎপাদনের জন্য এই মাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ নগদ টাকার লোভে কৃষকরা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছেন। তাতে অজান্তেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, ফসলি জমি থেকে শুরু করে সরকারি খাস জমি, সবখানেই চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। আনোয়ারা উপজেলার গ্রামে গ্রামে সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় মাটি কাটা, চলে ভোর পর্যন্ত। আর এসব মাটি বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে একাধিক সিন্ডিকেট। এছাড়া বারশত ইউনিয়নের বারশত, দুধ কুমড়া, বটতলী ইউনিয়নের হুলুদের পাড়া, বরৈয়া, পশ্চিম তুলাতলী, আইরমঙ্গল, বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলধর, পরৈকোড়া, বৈরাগসহ আনোয়ারার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে চলছে রাতের আঁধারে মাটি কাটা। মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনে একাধিক অভিযোগ দায়ের করলেও দৃশ্যত কোন অভিযান না থাকায় হতাশ এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের ‘রহস্যজনক’ ভূমিকার কারণে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তিগত জায়গায় মাটি ভরাটের অনুমতি চেয়ে উপজেলা প্রশাসন বরাবরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করে বাণিজ্যিকভাবে মাটি কাটা ও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে মাটিখেকো সিন্ডিকেট। স্থানীয় সাংবাদিকের মতে, এক্ষেত্রে অধিকাংশ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে মাটি কাটার অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থা শুধু আনোয়ারায় চলছে তা নয়, দেশের বহু স্থানেই এই আত্মঘাতী কাজটি চলছে।
টপ সয়েল তুলে ফেললে যে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায় সে বিষয়ে অধিকাংশ কৃষক ওয়াকেবহাল নন। আর যারা কিনছেন তারা তাদের প্রয়োজন মেটাতে মাটির ক্ষতি বৃদ্ধির কথা ভাববেন না।
এই ক্ষতিকর কাজ বন্ধ করার উপায় হলো কৃষক বা সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলা। এর জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচারণা চালাতে হবে। আর এ মাটি বেচা-কেনার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ জারি রাখতে হবে। শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে। মনে রাখতে হবে কোনে অবস্থাতেই কৃষি উৎপাদন ব্যহত করা যাবে না।
এ মুহূর্তের সংবাদ