সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক
শেষ ওভারে প্রয়োজন ২৯ রান। প্রথম বল আবার মোকাবেলা করলেন উমেষ যাদব। ১ রান করে দিলেন রিঙ্কু সিংকে। ১৬ বলে ১৮ রান নিয়ে ব্যাট করছেন তিনি। কেকেআর কতরানে হারবে সে হিসাব-নিকাশেই ব্যস্ত গ্যালারির দর্শকরা।
কিন্তু এরপর যশ দয়াল একের পর এক বল করেছেন আর একের পর এক উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন রিঙ্কু সিং। একটা-দুটা ছক্কা টানা মারা যায়; কিন্তু এমন এক পরিস্থিতিতে টানা ৫টি ছক্কা মেরে বসবেন, কে ভাবতে পেরেছিলো? টানা ৪ ছক্কা মেরে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের টি-টোয়েন্টি ফাইনাল জেতানোর ইতিহাস আছে। কিন্তু এখানে কোথাকার কোন রিঙ্কু সিং, টানা ৫টি ছক্কা মেরে দেবে, তা তো স্বপ্নেও অলীক কল্পনা মনে হবে। কিন্তু রিঙ্কু সিং সেই অবিশ্বাস্য এবং অলীক কল্পনার কাজটিই করে দেখালেন। টানা ৫টি ছক্কা মেরে বাজিমাত করেছেন। উত্তরপ্রদেশের ‘বাজিগর’ জিতিয়ে দিয়েছেন কেকেআরকে। খবর জাগোনিউজ’র
গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে কেকেআরের জয়ের নেপথ্যে রিঙ্কুর এই খেলা দেখে মুগ্ধ ক্রিকেটপ্রেমীরা। উচ্ছ্বসিত কেকেআর শিবিরও। এমন অবিশ্বাস্য জয়ের মুহূর্ত তো আর সব সময় তৈরি হয় না। রাতারাতি নায়ক হয়ে ওঠা রিঙ্কু সিংয়ে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথ মোটেই মসৃণ ছিল না। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের সাধারণ ঘরে জন্ম রিঙ্কুর। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পুষতেন মনে, কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথ মোটেই মসৃণ ছিল না। বরং ক্রিকেটার হওয়াটা তার কাছে ছিল বিশাল একটা সংগ্রাম। ১৯৯৭ সালের ১২ অক্টোবর আলিগড়ে জন্ম রিঙ্কুর। ৫ ভাইবোনের মধ্যে চারজনই ভাই। বোন রয়েছে একজন। তিনি ছিলেন তৃতীয়। অভাবের সংসার। তার বাবা বাড়িবাড়ি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। এক ভাই চালাতেন অটো। অন্য এক ভাইয়ের কোচিং সেন্টার ছিল। পড়াশোনায়ও ভাল ছিলেন না রিঙ্কু। নবম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হওয়ার পর আর স্কুল যাওয়া হয়নি তার। টানাটানির সংসারে দু’বেলা খাবারের জন্য রিঙ্কুকে ঝাড়ুদারের কাজেও লাগিয়েছিলেন তার বড় ভাই। টাকা উপার্জনের জন্য কাজের দরকার ছিল ঠিকই, কিন্তু ঝাড়ুদার তো হতে চাননি রিঙ্কু! ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ তখন তিনি। সে সময় বাড়ি ফিরে রিঙ্কু তার মাকে জানিয়েছিলেন, কোনও কাজ করার চেয়ে ক্রিকেটে মন দিতে চান তিনি। পরিবারও ছোট্ট রিঙ্কুর এই নেশার পেছনে খুব একটা বাধা দান করেনি। অভাব থাকলেও ক্রিকেট খেলায় কখনও ইতি টানেননি রিঙ্কু। তার যখন ১৭ বছর বয়স, সে সময় প্রথমবার উত্তরপ্রদেশ রাজ্য ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পান। ২০১৪ সালে নিজের রাজ্যের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেন রিঙ্কু। করেছিলেন ৮৩ রান। এরপর ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর প্রথমশ্রেণির ক্রিকেটে হাতেখড়ি রিঙ্কুর। প্রথম ৭টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪টি অর্ধশতরান করেছিলেন তিনি। যা দেখে অনেকেই বুঝেছিলেন যে, রিঙ্কুর মধ্যে ভাল ক্রিকেটার হওড়ার মশলা রয়েছে। ২০১৮ সালে বিজয় হাজারে ট্রফিতে ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ৪৪ বলে ৯১ রান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। তার আগেই, ২০১৭ সালে আইপিএলে ভাগ্য খুলে যায় রিঙ্কুর। ১০ লক্ষ রুপিতে তাকে কিনেছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। তবে সেবার টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগই পাননি রিঙ্কু। তাই ব্যাট হাতে তার কেরামতি দেখারও সুযোগ পায়নি বাইশ গজের দুনিয়া। ২০১৮ সালে ৮০ লক্ষ রুপিতে রিঙ্কুকে দলে নেয় কেকেআর। এরপর থেকে কলকাতারই ঘরের ছেলে হয়ে গেছেন উত্তরপ্রদেশের এই ছেলেটি। যদিও খেলার সুযোগ খুবই কম পেয়েছেন তিনি।