সুপ্রভাত ডেস্ক:
দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচারের পর জ্ঞান ফিরে এসেছে। বর্তমানে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা।
তবে তার স্বাস্থ্যগত সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে আসেনি। আরও পর্যবেক্ষণ শেষে মেডিক্যাল বোর্ড বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। খবরবাংলানিউজের।
শুক্রবার (০৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম।
তিনি বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। রাতেই তার জ্ঞান ফিরে এসেছে। তিনি বর্তমানে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. বদরুল আলম বলেন, এখনই তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি। শনিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে আমাদের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা বসবেন, এরপর এ বিষয়ে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে আপনাদের জানানো হবে।
তবে বর্তমানে ইউএনও ওয়াহিদার শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরোসার্জন মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমরা আশা করছি শনিবার ইউএনও ওয়াহিদাকে আইসিইউ থেকে বের করতে পারব। তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে এখনই কিছু জানাব না। শনিবার এ বিষয়ে আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ৬ সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে।
অস্ত্রোপচার শেষেই তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। তাৎক্ষণিকভাবে তার সেরে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী হলেও তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন বলে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১২টার দিকে অস্ত্রোপচার শেষে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় ভাঙা হাড়ের সাত-আটটা টুকরা ছিল, সেগুলো আমরা জোড়া দিয়েছি। জোড়া দিয়ে হাড়গুলোকে জায়গামতো বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে আরও ছোট ছোট কাটা ছিল, সেগুলোর সবগুলোকেও রিপেয়ার করা হয়েছে।
আমরা আশাবাদী কিন্তু এটা হেড ইঞ্জুরির ব্যাপার, তার মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে। মস্তিষ্কের ওপর একটা চাপ ছিল, সেটা আমরা রিলিফ করেছি। তবে এখনই ক্লিয়ারলি আমরা বলতে পারব না যে রোগী ভালো হয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, ইট উইল টেক টাইম। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আমরা তার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। আমরা আশাবাদী রোগী ভালো হয়ে যাবে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওনার ডান পাশটা যে অবশ ছিল, প্যারালাইজড ছিল। আশা করি সেটা রিভার্স হয়ে যাবে, সচল হয়ে যাবে। তবে কিছুদিন সময় লাগবে।
এর আগে রাত ৯টার দিকে তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার আগে তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। প্রেশার চেক করে অবস্থা স্বাভাবিক পেয়ে তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
এরও আগে চিকিৎসকরা জানান, ওয়াহিদার মাথার বাঁ দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথার কিছু অংশ ভেঙে মস্তিষ্কে প্রেশার তৈরি করছে। সেটি অপসারণ করা গেলে অবস্থার উন্নতি হবে এমন আশা থেকে তার অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।
পরে ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।