জ্ঞান ছাড়া জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারে না

বই পড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণ করছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, উন্নত জাতি গঠনে নতুন নতুন জ্ঞানের প্রয়োজন। আর বই হলো জ্ঞানের আধার।

গতকাল শুক্রবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘জ্ঞান ছাড়া একটি জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বই পড়ার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বই পড়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। একমাত্র আমরাই বই পড়ার কর্মসূচি চালাই। বইয়ের পেছনে কোনো বিনিয়োগ নেই। আজ সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন।’

‘একটা মোবাইল ফোনের দাম কত? এই টাকা দিয়ে কয়টা বই কেনা যায়? একটা টেলিভিশনের দাম কত? কেন বইয়ের পেছনে বিনিয়োগ হচ্ছে না? তাহলে এই জাতির চিন্তায় কীভাবে স্বচ্ছতা আসবে? কীভাবে জাতি আলোকিত হবে,’ প্রশ্ন রাখেন অধ্যাপক সায়ীদ।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সুন্দর স্বপ্নে ভরা বই আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছি। এসব বই একেকটি জ্ঞানের আধার।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম মহানগরের ৯৩টি স্কুলের প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে। এসব স্কুলের ৫ হাজার ৫০৩ জন ছাত্রছাত্রী মূল্যায়নপর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তাদেরকে পুরস্কার প্রদানের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া ১৭টি স্কুলের ৩১০ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরা পুরস্কার গ্রহণ করেন।

সকালে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। উৎসবে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি পারভীন মাহমুদ, সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী, রিহ্যাব এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল, গ্রামীণফোন চট্টগ্রাম সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।

স্বাগত বক্তব্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অতিথিদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সবসময় আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামিতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে সমাজকর্মী ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সম্মানিত ট্রাস্টি পারভীন মাহমুদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আলোর পথযাত্রী হিসেবে তোমরা আমাদের সঙ্গে আছ, থাকবে। নিজের জীবনকে আলোকিত করার জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি চাইব তোমরা সারাজীবন বইয়ের সাথেই থাকবে।’

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শুভার্থী ও সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ভালো কিছু ছড়িয়ে দিতে পারার মাঝেই আনন্দ। ভালো কিছুকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আলোকিত বাংলাদেশ গড়ব।

রিহ্যাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভালো মানুষ না হলে কেউ আলোকিত মানুষ হতে পারে না। আর আলোকিত মানুষ হতে হলে আমাদের সবাইকে ভালো বই পড়তে হবে।

গ্রামীণফোন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্কেল বিজনেস হেড সামরিন বোখারী পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচির সাথে গ্রামীণফোন প্রায় দুই দশক ধরে আছে। গ্রামীণফোন চায় সারা বাংলাদেশে আলোকিত মানুষ তৈরি হোক। গ্রামীণফোন বিশ্বাস করে আলোকিত মানুষ ছাড়া দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। তিনি বলেন, এখন মাই জিপি অ্যাপের মাধ্যমে বই পড়া যাচ্ছে। এছাড়া জিপি একাডেমি ও গ্রামীণ অ্যাক্সিলেটর প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমেও শিক্ষার্থীরা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী বলেন, তোমাদের মতো আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন থেকেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়ার সাথে যুক্ত ছিলাম।

পুরস্কার বিতরণ উৎসবে প্রতিটি স্কুলের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত পুরস্কার, শুভেচ্ছা পুরস্কার, অভিনন্দন পুরস্কার ও সেরাপাঠক পুরস্কার শিরোনামের চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে স্বাগত পুরস্কার পেয়েছে ২০০৪ জন, শুভেচ্ছা পুরস্কার পেয়েছে ১৬৭১ জন, অভিনন্দন পুরস্কার পেয়েছে ১৭৪০ জন এবং সেরা পাঠক পুরস্কার পেয়েছে ৮৮ জন।

বিজয়ী ৫ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থীকে সরাসরি মঞ্চ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। কর্মসূচির নিয়মানুসারে সেরা পাঠক বিজয়ীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রতি ১০ জনে একটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতি পর্বে ১ জন অভিভাবককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক ( প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। দিনব্যাপী উৎসবের এ আয়োজন ও পুরস্কারের বই স্পন্সর করছে গ্রামীণফোন লিমিটেড।