জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না

জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরের অনেক পুরোনো সমস্যা। বর্ষা বা অতিবৃষ্টির একই সময়ে পূর্ণিমা ও অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে ভরা কটালের কারণে যখন জোয়ার বেশি হয় সে সময় নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সেটাই জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত চাক্তাই খাল, রাজাখালি খাল, মহেশ খালসহ বিভিন্ন খালে রেগুলেটর নির্মাণ করায় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, পাথরঘাটা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার মানুষ এই সমস্যা থেকে প্রায় মুক্তি পেলেও রেগুলেটর ও স্ল্যাম ওয়ালের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে আছেন মোহরা ও আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার মানুষ। মোহরায় হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত ১০টি খাল, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত ২টি খাল এবং অসংখ্য নালা দিয়ে মোহরা জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা ৩০-৩৫ বছরের পুরোনো সমস্যা। অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় টানা ছয়-সাত দিন এ সমস্যা থাকে। এবার ২৫ জুলাই থেকে জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা শুরু হয়।

মোহরা ওয়ার্ডের উত্তর মোহরার প্রান্তিক এই পাড়া হালদা নদীর ঠিক পাশেই অবস্থিত। বসবাস প্রায় ৩০০ পরিবারের। বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় এই লোকালয়। একই পরিস্থিতি হয় এই ওয়ার্ডের মধ্যম ও পূর্ব মোহরায়ও। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতায়।

পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় এসব এলাতার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে কার্যত ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হয় এলাকাবাসীর। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাত দিন ধরে দিনে দুবার করে ডুবছে এ এলাকা।
জোয়ারের পানির কারণে আয়রোজগারেও প্রভাব ফেলে জানান দোকানি ও রিকশাচালকেরা। পূর্ব মোহরা এলাকার এক বাসিন্দা রিকশাচালক আবদুস ছত্তার জানান, তাঁর টিনের ঘরেও পানি ঢুকেছে। মাটির মেঝে কাদা হয়ে যাওয়ায় বালু দিয়েছেন। তবে জোয়ারের পানি রাস্তাঘাট ডুবে গোলে রিকশা চালাতে পারেন না। স্বাভাবিক সময়ে দিনে ১ হাজার-১ হাজার ২০০ টাকা আয় হলেও জোয়ারের কারণে হয় ৪০০-৫০০ টাকা।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান দুটি প্রকরের আওতায় হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত ১০টি খাল ও কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত ২টি খালে রেগুলেটর (জোয়ার প্রতিরোধক) ঘটক নির্মাণ করা হচ্ছে। আর হালদা নদীতে ৬ দশমিক ৮৮৫ কিলোমিটার বন্যা প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০টির মধ্যে ৩টির কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ২টির কাজ চলমান।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, প্রকল্প সংশোধন ও বরাদ্দ না পাওয়ায় ঠিক সময়ে কাজ শেষ হয়নি। তবে আগামী জানুয়ারিতে সব রেগুলেটর ও স্লাম ওয়ালের কাজ শেষ হবে। এরপর মোহরাও জোহরের জলাবদ্ধতা থাকবে না।
মোহরার মতো নগরের অনেক এলাকা এখনো জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রয়াস দরকার। কারণ এ বিড়ম্বনা থেকে আসলেই মুক্তি চায় নগরবাসী।