প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা ৫টি মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলার আধুনিকায়নে প্রকল্পগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। মহানগরে ১৮ তলাবিশিষ্ট জেলা পরিষদ টাওয়ার হয়ে উঠবে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্যচর্চার তীর্থভূমি। এ ভবনের একটি ফ্লোরে ১০ হাজার বর্গফুট স্পেস নিয়ে ইতিহাস-ঐতিহ্য কর্নার করা হচ্ছে জেলা পরিষদের অর্থায়নে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে ভালবাসেন বলেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চট্টগ্রামবাসীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম অর্জন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল তৈরি করেছেন ও উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরো বলেন, চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে একাত্ম হয়ে মিশে থাকা কর্ণফুলী নদী যাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা ও গল্প। সেই নদীকে চিরস্মরণীয় করে রাখবেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু টানেল। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী তথা চট্টগ্রামবাসীর সামনে এখন দেশরতœ শেখ হাসিনার দুর্বার উন্নয়ন অভিযাত্রায় সামিল হওয়ার হাতছানি। ৩.৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কবিশিষ্ট এ টানেল শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশ নয়, এশিয়ান হাইওয়েও যুক্ত হবে। ২৮ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী হবে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ মহানগরী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশতী, দিলোয়ারা ইউসুফ, সদস্য আ ম ম দিলসাদ, রওশন আরা বেগম, ফারহানা আফরীন জিনিয়া, আবদুল আলীম, এইচ এম আলী আবরাহা দুলাল, দেবব্রত দাশ, ছিদ্দিকুর রহমান, মো. নুরুল মোস্তাফা সিকদার সংগ্রাম, ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ, এস, এম আলমগীর চৌধুরী, মোহাম্মদ এরফানুল করিম চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ এমরান, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দিদারুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু টানেলের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জেলা পরিষদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা যে পাঁচ মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন করবেন সেগুলো হলো- ১৮ তলাবিশিষ্ট নান্দনিক জেলা পরিষদ টাওয়ার, ১০০০ আসনের পটিয়া শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স, রাউজানের শেখ কামাল কমপ্লেক্স এবং আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়ার জেলা পরিষদ ডাকবাংলো।
জেলা পরিষদের ইতিহাসে এমনকি যেকোন স্থানীয় সরকারের ইতিহাসে এতগুলো মেগা স্থাপনা উদ্বোধনের ঘটনা এই প্রথম। নান্দনিক নির্মাণশৈলীর এবং অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১৮ তলবিশিষ্ট জেলা পরিষদ টাওয়ারটি মূলত জেলা পরিষদের অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন। প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ১৩০০০ থেকে ১৫০০০ বর্গফুট। উঠা-নামার জন্য ৩টি সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে ৬টি দ্রুত গতিসম্পন্ন আধুনিক এমআরএল লিফট। এ ভবনের বেজমেন্টের ২টি ফ্লোর ব্যবহার হবে পার্কিং হিসেবে যাতে প্রায় ১০০টি গাড়ি পার্কিং করে রাখা যাবে, ২টি ফ্লোর ব্যবহার হবে জেলা পরিষদের অফিস হিসেবে, ১টি ফ্লোরে থাকবে ছোট-বড় ৩টি কনফারেন্স হল, চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারকসমূহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১টি ঐতিহ্য ফ্লোর রাখা হয়েছে, একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আর বাকি ১১টি ফ্লোর ভাড়া দেয়া হবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক-প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি অফিস স্পেস হিসেবে এবং টপ ফ্লোরটি ভাড়া দেয়া হবে বড় মাপের কোন আধুনিক রেস্টুরেন্টের জন্য।
চুক্তিমূল্য অনুসারে এ ভবন নির্মাণে প্রাথমিকভাবে জেলা পরিষদের ব্যয় ৭৭ কোটি ১৮ লক্ষ ৪১ হাজার ২৯৭ টাকা হলেও বিভিন্ন সংযোজন ও আনুষঙ্গিক কাজসহ প্রকৃত ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা যার পুরোটাই বহন করা হচ্ছে জেলা পরিষদের নিজস্ব আয় থেকে।
এছাড়া পটিয়া শেখ কামাল অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস দ্বিতল কমপ্লেক্সে ১০০০ আসনবিশিষ্ট একটি আধুনিক অডিটোরিয়ামের পাশাপাশি থাকছে ২০০ আসনের আরও ২টি কনফারেন্স হল । এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। রাউজানের নোয়াপাড়ায় তিন তলাবিশিষ্ট শেখ কামাল কমপ্লেক্সে ৫০০ আসনের ১টি অডিটোরিয়াম, ১টি বড় পাঠাগার এবং ৮টি আবাসিক কক্ষ বিদ্যমান। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭ কোটি ৩২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
আনোয়ারা ডাকবাংলোটি ১টি আধুনিক ডাকবাংলো। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। রাঙ্গুনিয়াতেও জরাজীর্ণ ডাকবাংলোটি ভেঙে নতুন আধুনিক ডাকবাংলো তৈরি করা হয়েছে। এটিতেও ৫টি এসি রুম, ১টি করে এসি ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম ও কমন রুম বিদ্যমান। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা।
				

















































