নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »
বাঁশখালীর গণ্ডামারায় স্থাপিত ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে গতকাল শনিবার প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে উক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুতের মধ্যে ১২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শনিবারে উক্ত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জাতীয় গ্রিডের ৪ লাখ ভোল্টের সঞ্চালন লাইনের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পিজিসিবি, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি এবং অন্যান্য সকল স্টেক হোল্ডারদের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোরশেদ আলম জানান, বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আজ ( শনিবার) জাতীয় গ্রিড থেকে ব্যাক-ফিড প্রক্রিয়ায় প্রকল্পের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে পরীক্ষামূলক বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে উক্ত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযোজন করা হয়েছে। প্রতিটি যন্ত্রাংশে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই ও নিরীক্ষণ করে উৎপাদনে যেতে আগামী এপ্রিল কিংবা মে মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে সরকারের সাথে চুক্তি অনুসারে আগামী জুন মাসে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বাস্তবায়িত পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং বাংলাদেশ সরকার ও পিজিসিবির সাথে বাস্তবায়িত ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আই এ) অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁশখালীর ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ হচ্ছে।
প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী মো. ফারুক বলেন, আজ (শনিবার) কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক বিদ্যুতায়ন করতে পেরে আমরা বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পিজিসিবি, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটি এবং অন্যান্য সকল স্টেক হোল্ডারদের সাবির্ক সহযোগিতা এবং সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞ। আজ বিদ্যুৎ বিভাগের একটি মাইলফলক অতিক্রম করলাম।
বিদেশি ব্যাংকের অর্থায়নে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে বড় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এই কেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে নেয়া বিদ্যুতের দামে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৬ সালে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সই হয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেনাবেচা সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়। ওই বছরই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং।
চুক্তি অনুযায়ী, এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা থাকছে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশের মালিক। চুক্তিতে ৪৫ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সে হিসাবে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পরে সময় বাড়ানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে।
বঙ্গোপসাগরের তীরে বাঁশখালীর গ-ামারায় ৬০৬ একর জমিতে গড়ে উঠছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুই ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের ১৯৮টি টাওয়ার বসানো হয়েছে। মদুনাঘাট সাব স্টেশনে যে গ্রিড আছে, সেই গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হবে। সঞ্চালন লাইনটি তৈরি করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমদানিনির্ভর কয়লায় চলবে ‘এসএস পাওয়ার ওয়ান’ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব কয়লা আমদানি হবে ইন্দোনেশিয়া থেকে। তবে প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হবে প্রকল্পটিতে। এসব কয়লা খালাসের জন্য সাগরতীরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বড় জেটি।