জিয়ানা ও ভাষা আন্দোলন

সাগর আহমেদ »

টোকন মামা ও কিশোর দলের সদস্য অপু, তিয়ান ও টিয়ানা কিশোরগঞ্জে দুর্দান্ত এক অ্যাডভেঞ্চার শেষ করে
টিয়ানাদের বাসায় বেড়াতে এলো । টিয়ানার ছোট বোন জিয়ানা খুব জ্ঞানপিপাসু। মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়লেও তার জানার আগ্রহের শেষ নেই। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। টোকন মামা ড্রয়িং রুমে বসতেই সে টোকন মামাকে প্রশ্ন করলো, ‘টোকন মামা বলেন না, এই ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন কখন আর কীভাবে শুরু হয়েছিলো?
‘টোকন মামা বললেন,‘এ আন্দোলন একদিনে শুরু হয়নি। আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পাঞ্জাবি নেতৃবৃন্দ চাইলো সারা পাকিস্তানে উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু বাঙালিরা ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি সভা করে দাবি তুললো, উর্দু একমাত্র নয় , বরং বাংলাও হবে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা।’
জিয়ানা আগ্রহের সাথে জানতে চাইলো, ‘বাঙালিরা কি এ দাবি করেই বসে রইল?’
টোকন মামা বললেন, ‘না, না, তা হবে কেন? বাঙালিরা তমুদ্দুন মজলিস নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার সপক্ষে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিলো।‘
জিয়ানা মাথা দুলিয়ে বলল, ‘এমন আন্দোলনের মুখে পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাংলাভাষার দাবি মেনে নিলো, তাই না?’
টোকন মামা মৃদু হেসে উত্তর দিলেন, ‘একেবারেই না, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মো. আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে এবং ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বলেছিলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। সে সময় উপস্থিত ছাত্ররা নো নো বলে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো।
জিয়ানা বলল, ‘এরপর কী হলো?’
অপু এতক্ষণ শুনছিলো। সে বলল, ‘তারপর পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে কয়েক বছর ধরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন চলতেই থাকলো।’ তিয়ান বলল, ‘শুধু তাই না, এদেশের বরেণ্য কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পীরা
তাদের নিজের নিজের মতো করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলো।’
টিয়ানা বলল ‘হ্যা, তাইতো, জনপ্রিয় ও প্রবীন কন্ঠশিল্পী আঃ লতিফ গাইলেন:
‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়,
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে পায়।’
টোকন মামা বললেন, হ্যা, এভাবেই পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আন্দোলন গড়ে উঠল।
অবশেষে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশগুলি চালালে, ঘটনাস্থলে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর প্রমুখ মারা যান। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে স্বীকৃতি পায়।’
অপু খুব উৎসাহ নিয়ে আবেগঘন কন্ঠে বলল, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ঘটনা একমাত্র বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসেই ঘটেছে। আর কোনো জাতি ভাষার জন্য এভাবে রক্ত দেয়নি।’
টোকন মামা বললেন, ‘আর তাইতো জাতিসংঘ বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিশ্বসভায় তাই বাংলা ভাষার মর্যাদা অনন্য।’
জিয়ানা উদিপ্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘সত্যিই মামা, বাঙালি জাতি ও বাংলাভাষার এই অর্জন গৌরবের। আমরা প্রাণ দিয়ে হলেও এই দেশ, জাতি ও ভাষার সম্মান ধরে রাখবো।’