জিঙ্গেল বেলস

সুব্রত চৌধুরী »

শীতের পদধ্বনি এবছর আগেভাগেই শোনা গেছে। শীতটাও ইতোমধ্যে বেশ জাঁকিয়েই পড়ছে। আর শীত মানেই তো বড়দিন, উৎসবের রঙে রঙিন হওয়ার ক্ষণ।” জিঙ্গেল বেলস, জিঙ্গেল বেলস” এর গানের সুরে মেতে ওঠা।
বড়দিন মানে ক্রিস্টমাস ট্রি, ঝলমলে তারকা, সোনারঙা ঘণ্টা, চমকে ওঠা সার্টিনের নানা রঙের ফিতে, দোকানে ম ম করা রকমারি কেক, পেস্ট্রি, কুকিজের গন্ধ।
আলবার্ট প্রতি বছর শীতের ছোঁয়া পেয়েই বড়দিনের আনন্দ আয়োজনে মেতে ওঠে। তাদের বাড়ির কাছে যে বস্তিটা আছে সেই বস্তির ছেলে-মেয়েরাও বড়দিনের অপেক্ষায় থাকে কখন আলবার্ট আসবে বড়দিনের উপহারের ডালা নিয়ে।
প্রতি বছর আলবার্ট ও তার কাজিনরা মিলে বড়দিনের অনেক আগেই ক্রিস্টমাস ট্রি সাজানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তারা বড় বড় মোজা ক্রিস্টমাস ট্রিতে ঝুলিয়ে রাখে। বড়দিনের আগের রাতে বল্গা হরিণ স্লেজে চেপে চুপিসারে সান্তা এসে পৌঁছে যান সকলের ঘরে। সান্তা ক্লজ এসে উপহার দিয়ে ভরে দেয় তাদের ঝোলানো মোজা।
আলবার্ট সারা বছর বড়দিনের প্রোগ্রাম নিয়ে প্ল্যান করতে থাকে। স্কুলের টিফিন খরচ বাবদ মা প্রতিদিন যে টাকা দেয় সে টাকাটা জমিয়ে রাখে বড়দিনের উপহার কেনার জন্য।
বড়দিনের দিন সে বাড়ির কাছেই যে বস্তিটা আছে সেই বস্তিতে গিয়ে বড়দিনের উপহারগুলো বস্তির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়। উপহারগুলো পেয়ে খুশিতে তাদের চোখ মুখ চিকচিক করে ওঠে। বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পেরে আলবার্টও খুব খুশি হয়।
সেদিন আলবার্ট বাবা মায়ের সাথে বড়দিনের কেনাকাটা করার জন্য শপিং মলের উদ্দেশে গাড়িতে চেপে বসে। শপিংমলে পৌঁছে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বস্তির ছেলে-মেয়েদের জন্য বেশ কিছু উপহার কিনলো। উপহারগুলো নিয়ে সে কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ায় পেমেন্ট করার জন্য। আলবার্ট নিজের মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতেই বাবা জিজ্ঞেস করে, তুমি এতো টাকা কোথায় পেলে?
স্কুলের টিফিন বাবদ মা আমাকে যে টাকাটা দিত সে টাকা খরচ না করে আমি জমিয়ে রাখতাম। আজ সে টাকা দিয়েই বড়দিনের উপহারগুলো কিনলাম।
আলবার্ট এর কথা শুনে বাবা খুব খুশি হয়ে তার পিঠ চাপড়ে দিলেন। কেনাকাটা শেষে বড়দিনের উপহারগুলো গাড়িতে ভরে তারা বাড়ির পথে রওনা দিল।গাড়ি স্টার্ট দিতেই আলবার্ট ক্যাসেট প্লেয়ারে বড়দিনের জনপ্রিয় গান “জিঙ্গেল বেলস, জিঙ্গেল বেলস” চালিয়ে দিল। গানের তালে তালে আলবার্ট হাতে পায়ে তাল ঠুকছিল। হঠাৎ চোখের পলকে বিপরীত দিক থেকে একটি ট্রাকের সাথে তাদের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এরপর আলবার্ট এর আর কিছুই মনে নেই।যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন সে হাসপাতালের বেডে নিজেকে আবিষ্কার করে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মা-বাবার উদ্বিগ্ন মুখ।
বাবা, কেমন লাগছে এখন? আলবার্ট উত্তর দিতে পারে না, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ, বড়দিনের উপহার বিলোতে হবে না?
আলবার্ট আস্তে আস্তে মাথা নাড়ে। তার কর্নকুহরে তখন বাজতে থাকে “জিঙ্গেল বেলস,জিঙ্গেল বেলসৃৃ..।”
বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর আলবার্ট বাসায় ফিরে আসে।সে মনে মনে প্ল্যান করে বস্তির কাকে কাকে কী কী উপহার দিবে? ইতোমধ্যে বড়দিনও দরজায় কড়া নাড়ে। বড়দিনের আগের রাতে সে জানালার গ্লাস দিয়ে দেখে সান্তা ক্লজ এসে
ক্রিসমাস ট্রি তে ঝুলিয়ে রাখা বড়ো বড়ো মোজাগুলো বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে।খুশিতে তার চোখ চিকচিক করে ওঠে। মনে মনে সে ছোট মামার লেখা ছড়াটা আওড়াতে থাকে-
“শীতের রাতে হরিন স্লেজে সান্তা আসে চুপি/ জোব্বা গায়ে ঝোলা কাঁধে মাথায় পরে টুপি/ সান্তা আসে বড়দিনের
বার্তা নিয়ে সুখে/ ঝোলা ভরা খেলনা, টফি সফেদ দাঁড়ি মুখে/ সান্তার মাঝে নেই ভেদাভেদ মাতে সাম্যের গানে/
সান্তা এলে হৈ হুল্লোড়ে ডাকে খুশির বানে/ বড়দিনে খুশির বীণে সুখের ছবি আঁকে/ ঝোলা কাঁধে সান্তাক্লজে হারায় পথের বাঁকে।”
ছড়াটা আওড়াতে আওড়াতে আলবার্ট ঘুমের রাজ্েয হারিয়ে যায়। পরের দিন তাকে সকালে ঘুম থেকে উঠে গির্জার প্রার্থনা শেষে বন্ধুদের সাথে নিয়ে বস্তিতে যেতে হবে উপহার সামগ্রী বিলোতে।
অনতিদূরের গির্জার গ্র্যান্ড ফাদার ক্লকটা ঢং ঢং করে জানিয়ে দেয় রাত নিশুতির কথা।