জাহাজভাঙা শিল্পে গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইস্যু

চট্টগ্রামে দুইদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক »

চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে দুইদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউ’র মোহনা বলরুমে এই বৈশ্বিক সম্মেলন শুরু হয়।

‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি ফর শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম দিন পাঁচটি বিষয়ে রাউন্ড টেবিল সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থা (আইএমও), নরওয়ে দূতাবাস এবং বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সম্মেলনে আলোচনার মধ্য দিয়ে জাহাজভাঙা শিল্পকে আরও ঝুঁকিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব করে তুলতে পথ খোঁজা হয়। ইয়ার্ডগুলো পরিবেশবান্ধব করে তোলার পাশাপাশি এই শিল্পে ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে সম্মেলনে।

সম্মেলনের শুরুতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা; তিনি বলেন, জাহাজভাঙা শিল্প বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত। বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব ও ঝুঁকিমুক্ত করতে অর্থায়নের জন্য উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। নরওয়ে এ শিল্পের উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করছে। সরকারের সহযোগিতা দরকার। আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। নরওয়ের জাহাজ মালিকরা আগ্রহী হচ্ছেন বাংলাদেশে শিপ রিসাইক্লিং করতে।’

রাউন্ড টেবিল সেশনে অংশ নিয়ে বিএসবিআরএ’র সহ-সভাপতি ও পিএইচপি শিপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, ‘জাহাজভাঙা শিল্প খাত থেকে প্রতি বছর আয় হয় প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন ডলার এবং সরকারের রাজস্ব আয় হয় প্রায় ১১০ মিলিয়ন ডলার। এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার মানুষ কাজ করেন, পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ফলে দেশের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নে এ শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।’

সম্মেলনে রাউন্ড টেবিল সেশনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, শিপ রিসাইক্লিং এ্যাক্ট-২০১৮ এর বিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুন মাসে হংকং কনভেনশন অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ সরকার। উক্ত কনভেনশন ২০২৫ সালের জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে। এ সময়ের মধ্যে জাহাজ পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণ ইয়ার্ডগুলোকে হংকং কনভেনশন অনুযায়ী কমপ্লিয়েন্ট (গ্রীন) ইয়ার্ডে উন্নীত করতে হবে। অন্যথায় ঐ সময়ের পর থেকে ইউরোপ ও উন্নত দেশের কোন জাহাজ পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বাংলাদেশে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত নয়।

ইয়ার্ডগুলোকে কমপ্লায়েন্ট হিসেবে উন্নীত করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ১০৮টি ইয়ার্ডের শিপ রিসাইকিং ফ্যাসিলিটি প্ল্যান (এসআরএফপি) অনুমোদন দিয়েছে। দেখা যায়, প্রতিটি ছোট আকারের ইয়ার্ডে এসআরএফপি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রায় ৩০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা, মাঝারি আকারের ইয়ার্ডের জন্য ৪০ কোটি থেকে ৭০ কোটি টাকা এবং বড় আকারের ইয়ার্ডের জন্য ৮০ কোটি থেকে ১১০ কোটি টাকা প্রয়াোজন।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত চারটি ইয়ার্ড যথাক্রমে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কবির স্টিল, এস.এন করপোরেশন (ইউনিট-২) এবং কে আর শিপ রিসাইকিং ইয়ার্ড কমপ্লিয়েন্ট (গ্রীন) ইয়ার্ডে উন্নীত হয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে বাকি ইয়ার্ড মালিকগণের পক্ষে গ্রীন ইয়ার্ডে উন্নীত করা সম্ভব হচ্ছে না। এটাই এখন জাহাজভাঙা শিল্পের প্রধান সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকার, আইএমও’সহ উন্নয়ন সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় সম্মেলনে।

সম্মেলনে রাউন্ড টেবিল সেশনে আরও অংশ নেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, আইএমও’র কর্মকর্তা জন আলনসো, আইআইইউসির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম আজিজ, জাহাজভাঙা শিল্পের পরামর্শক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুবুর রহমান, বিআইএমসিও এর হেড অব মেরিন এনভাইরনমেন্ট অ্যারন সেরেনসেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহ মো. হেলাল উদ্দিন, ক্লাসএনকে এর গ্রিন সার্টিফিকেশন ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি তাকেশি নারুসে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, এসআরএস শিপব্রেকার্স এর সাদমান শাহরিয়ার রাফসান, আইএমও এর ন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বাদল, নরওয়ে দূতাবাসের সিনিয়র এডভাইজার মোরশেদ আহমেদ প্রমুখ।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রামের জাহাজাভাঙা শিল্পের বিভিন্ন ইয়ার্ড পরিদর্শন করবেন সংশ্লিষ্টরা। এই সম্মেলনের মাধ্যমে গ্রীন ইয়ার্ড গড়তে সহজ শর্তে ঋণ পেতে সুরাহামূলক ব্যবস্থা, সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।