এম এস ফরিদ :
জামিল এবার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পড়ালেখায় বেশ মনোযোগীও। এবারও সে শ্রেণির প্রথম বালক। বরাবরই জামিল তার রোল ধরে রাখার চেষ্টা করে। তাছাড়া জামিলের বাবা-মাও পড়ালেখার ব্যাপারে বেশ খোঁজখবর রাখেন। জামিল প্রতিদিন নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায় এবং বিদ্যালয়ের সমস্ত বাড়ির কাজ মনোযোগ দিয়ে তৈরি করে থাকে। একদিন বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক সবাইকে পড়া দিলেন রচনা শিখতে। রচনার নাম হলো ‘তোমার প্রিয় কবি’। জামিল ডায়েরিতে বাংলা বিষয়ের পড়া লিখে রাখল। ছুটি হওয়ার পর বাড়ি ফিরেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল কখন রচনাটি শিখবে। জামিল তার বাবাকে ডায়েরি দেখিয়ে বলল, জানো বাবা আজ বাংলার শিক্ষক আমাদের রচনা শিখতে বলেছে। আর দেখো রচনার নাম হলো ‘তোমার প্রিয় কবি’। রচনা শিখতে আমাকে সাহায্য করতে হবে বাবা। না হয় আমি তেমন গোছাতে পারব না। বাবা বললেন, ঠিক আছে। আমি তোমাকে রচনা শিখতে সাহায্য করব। তবে তুমি বলো, তোমার প্রয় কবি কে? জামিল বলল, আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাবা বললেন, বাংলা সাহিত্যের অনেক কবি আছেন । তা তুমি কাজী নজরুল ইসলামকে কেন প্রিয় কবি মনে করো জামিল? জামিল উত্তর দিল, আমি দাদুর কাছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমন্ধে অনেক গল্প ও কবিতা শুনেছি। সেই থেকে আমার প্রিয় কবি তিনি। তাছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের ছড়া-কবিতাগুলো আমার বেশ মুখস্থ হয়ে গেছে দাদুর কাছ থেকে শুনে শুনে। আমি যখন ঘুমোতে যাই তখন দাদু আমাকে বেশির ভাগ নজরুলের ছড়া কবিতা শোনাতেন। যেমন- ‘প্রভাতী’, ‘কাঠবিড়ালী’, ‘আমি হব’, ‘ঝিঙেফুল’, ‘লিচু চোর’, ‘শিশু জাদুকর’Ñ ইত্যাদি ছড়া আমার বেশ ভালো লাগে। এসব ছড়া-কবিতা দাদুর মুখে শুনতে শুনতে মুখস্থ করে ফেলেছি। জামিল ফের বলল, আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামই। আমি আমার প্রিয় কবিকে নিয়ে রচনা শিখব। তুমি সাহায্য করবে তো বাবা? জামিলের বাবা ছেলের এসব কথাবার্তা শুনে তো অবাক। তাই তিনি সম্মতি দিলেন যে, ঠিক আছে তোমাকে সাহায্য করব। জামিল রচনা শিখে ফেলল। পরের দিন যাতে সবার চেয়ে ভালো লিখতে পারে তেমন প্রস্তুতিও নিল।
শনিবার স্কুলে গেল জামিল। তৃতীয় পিরিয়ডে বাংলা ক্লাস। স্যার এসেই রচনা লিখতে দেবেন। জামিল মনে মনে অপেক্ষা করছে কখন বাংলা পিরিয়ড শুরু হবে। বিদ্যালয়ের ঘণ্টা বাজলো। তৃতীয় ঘণ্টা শুরু হলো। স্যার সবাইকে রচনা লিখতে দিলেন। বোর্ডে বড় করে লিখে দিলেন ‘তোমার প্রিয় কবি’। সময় মাত্র ৩০ মিনিট। জামিলসহ সবাই লিখা শুরু করলো।
জামিল পুরো ৩০ মিনিটেই রচনাটি লিখলো। রচনার মাঝে মাঝে অনেক কবিতার লাইন সে যুক্ত করল। এভাবে লিখতে লিখতে প্রায় ১০টি কবিতার পঙক্তি দিয়ে সে দীর্ঘ করে রচনাটি লিখলো। খাতা জমা দিলো সবাই। পরের দিন স্যার খাতা মূল্যায়ন করে খাতা ফেরত দিলেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। জামিলের খাতাটি শুধু বাকি রইলো। হঠাৎ স্যার জামিলকে ডাকল এবং খাতাটি দেখিয়ে বলল, জামিল তুমি রচনার মাঝে মাঝে এতো ছড়া-কবিতার পঙক্তি কিভাবে দিলে? জামিল বলল, আমি ছোট থেকেই দাদুর মুখে এসব কবিতার লাইন শুনে শুনে আয়ত্ত করে ফেলেছি। তাছাড়া আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে নজরুল অন্যতম।
স্যার জামিলের মুখে বিস্তারিত শুনে রীতিমত থ হয়ে গেলেন এবং জামিলকে ধন্যবাদ আর ¯েœহ করলেন। ক্লাস শেষ হওয়ার পূর্বে স্যার কাজী নজরুল ইসলামের সবগুলো ছড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন। সবাই কবিতা আর ছড়া শুনে বেশ আনন্দ পেল। তারপর হঠাৎ বাংলা ঘণ্টার ইতি হলো। আর জামিল খুশি মনে বাড়ি ফিরে বাবাকে বলল, আমি আমার প্রিয় কবিকে নিয়ে রচনা লিখে সবার থেকে ভালো করেছি বাবা। আর স্যারও আমাকে বেশ আদর করলেন। আমার লেখা রচনাটি ক্লাসের সবাইকে পড়ে শোনালেন । আমি বেশ আনন্দিত বাবা। জামিলের কথা শুনে আনন্দে বাবারও বুক ভরে গেল। পরের দিন বাবা বাজার থেকে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি ছড়ার বই উপহার দিলেন জামিলকে। জামিল বাবার দেয়া উপহার আর প্রিয় কবির বই দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে গেল।