সুপ্রভাত ডেস্ক »
জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বড় এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। এদিন দুপুর ২টার কিছু সময় পর এ বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার বিঘ্নিত হয় মোবাইল ফোন সেবা, বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন চললেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন, নানা সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ৪-৫ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায় (বিদ্যুৎ) সরবরাহ চালু হয়।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মুখপাত্র এবিএম বদরুদ্দোজা সুমন বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪ মিনিটে সঞ্চালন লাইন ‘ট্রিপ করলে’ জটিলতা তৈরি হয়।
‘এর ফলে বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী জোন এবং বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে যায়। আমরা ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ ফিরিয়ে এনেছি। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে।’ খবর বিডিনিউজের।
এই জটিলতার কারণ খতিয়ে দেখতে পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (সিস্টেম অপারেশন) বি এম মিজানুল হাসানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
কমিটিতে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বদরুদ্দোজা সুমন।
তিনি জানান, মেরামত শুরু হওয়ার পর ৯টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীতে, ১০টা ১০ মিনিটে খুলনায় এবং ১০টা ৩০ মিনিটে বরিশালে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
বিদ্যুৎখাত সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে ইশ্বরদী-ভেড়ামারা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন ‘ট্রিপ’ করে। এর প্রভাবে ভেড়ামারায় বাংলাদেশ-ভারত ৪০০ কেভি হাই ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের (এইচভিডিসি) একটি সার্কিট ‘ট্রিপ’ করে।
তাতে দেশের ২৪ জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। ৪০ মিনিট পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও কোথাও কোথাও সরবরাহ স্বাভাবিক করতে প্রায় চার ঘণ্টা লেগে যায়।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করতেও কিছুটা বিদ্যুৎ লাগে। আবার কোনো কারণে কোনো সঞ্চালন লাইনে লোড বেড়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
কোনো কারণে কোনো কেন্দ্র বা সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সিস্টেমে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু এলাকা বিদ্যুৎহীন রেখে অথবা অন্য কোনো গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে ‘লোড’ সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা করা না গেলে অর্থাৎ লোড সমন্বয় না হলে অন্য কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ বাড়ে।
এভাবে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেনারেটর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর নতুন করে কোনো কেন্দ্র বন্ধ হলে সরবরাহে ঘাটতি আরও বাড়ে এবং একইভাবে অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রও বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কালবৈশাখী ঝড়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালীপুরে একটি বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে পড়ে ২৩০ কিলোভোল্টের সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২০১৭ সালের ২ মে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ জনপদের অন্তত ৩২ জেলার মানুষকে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়।
তার আগে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা সঞ্চালন কেন্দ্রে বিপর্যয় দেখা দিলে ভারতের সঙ্গে সঞ্চালন লাইন বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ভারতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়া। একই সময় দেশের উৎপাদনে থাকা সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র একযোগে বন্ধ হয়ে গেলে, ধস নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সারা দেশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং বৃহত্তর ফরিদপুরসহ ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, গ্রিড লাইন থেকে ‘ট্রিপ’ করায় তার পুরো এলাকাই বেশ কিছুক্ষণ বিদ্যুৎহীন ছিল সকালে।
ওজোপাডিকোর বিতরণ লাইনে সাড়ে ১০টাক দিকে বিদ্যুৎ এলেও ‘ফুল লোড’ পাচ্ছিল না বলে দুপুরে জানান তিনি।
বিকালে আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আড়াইটার দিকে পুরো ঠিক হয়ে যাওয়ায় আর সমস্যা নেই। এখন যদি কোথাও বিদ্যুৎ না থাকে, সেটা উৎপাদন ঘাটতির জন্য।’
পিজিসিবির বরিশাল অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান পলাশ বলেন, ‘লাইনে ট্রিপ করায়’ সকাল ৯টা ৩ মিনিটে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভোলার ২২৫ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ৯৫ মেগাওয়াট এজিকো পাওয়ার প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। তাতে বরিশালের ছয় জেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে।
রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ১৬ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা নর্দান পাওয়ার কোম্পানির (নেসকো) রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রাহকরা ৪০ মিনিট বিদ্যুৎহীন ছিলেন।
নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘৪০ মিনিট বন্ধ থাকার পর ১০টার দিকে পুনরায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু জয়। প্রথমে চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। পরে তা বাড়তে থাকে।’
‘রাজশাহী মহানগরীতে ৮০ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে দুপুর ২টার দিকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এ কারণে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।’
মোবাইল সেবাও বিঘ্নিত
বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিঘিœত হচ্ছে মোবাইল ফোন সেবাও।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মোবাইল ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, তারা মোবাইলে কল, এসএমএস ও ইন্টারনেট সংযোগ পেতে সমস্যায় পড়ছেন।
কথা হচ্ছিল রাজধানীর গ্রিনরোডের বাসিন্দা তনু সেনের সঙ্গে। জানালেন, তিনি মোবাইল নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না।
‘ফোন করতে গেলে কলই ঢুকছে না। কল ড্রপ হচ্ছেও খুব। বাসায় ইন্টারনেট নাই, তাই মোবাইলে নেট চালাতে চাচ্ছিলাম, নেটও কানেক্ট হচ্ছে না।’
চট্টগ্রামের মিররসরাইয়ের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন জানান, বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর থেকেই তিনি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় আছেন।
‘কল করছি, কিন্তু কথা শুনতে পাচ্ছি না। এসএমএসও পাঠাতে পারছি না। খুবই ঝামেলায় পড়েছি।’
এ সমস্যার সমাধানে বিদ্যুৎ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসি।
সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে এমনটা হচ্ছে। কারণ সব মোবাইল অপারেটরের ব্যাকআপ তো সমান না। তাই এ সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব এই সাময়িক দুর্ভোগের কারণে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এক বিবৃতিতে অ্যামটব জানিয়েছে, ‘জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাময়িক সময়ের জন্য টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘিœত হতে পারে।’
ডিজেলের জন্য পেট্রোল পাম্পে দীর্ঘ লাইন
জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাটের কারণে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে ঢাকাসহ দেশের বড় এলাকা। এতে কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন চললেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর বিকাল থেকেই লোকজন কনটেইনার নিয়ে তেলের জন্য লোকজন বিভিন্ন তেলের পাম্পে ভিড় জমায়।
সন্ধ্যায় মহাখালীর ক্রিসেন্ট পেট্রোল পাম্পে খালি কনটেইনার ও ড্রাম নিয়ে লোকজনকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ডিজেলের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
ওই পেট্রোল পাম্পে বনানীর ১৫ নম্বর রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনের কর্মী মো. জুয়েল কনটেইনার হাতে তেল নিতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘জেনারেটরের জন্য সাধারণত ১০০ লিটার ডিজেল রিজার্ভে থাকে, দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা টানা জেনারেটর চলার কারণে তেল শেষ দিকে চলে আসে। আরও কয়েক ঘণ্টা যদি কারন্ট না থাকে, তাহলে জেনারেটর বন্ধ হয়ে লিফটসহ পুরো ভবন অন্ধকার হয়ে যাবে। এ জন্য তেল নিতে আসলাম।’
গুলশান-১ এর ৭ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির মাজেদা কমপ্লেক্সের কর্মী মো. ইউসুফ জানান, তাদের ১৫ তলা ভবনে ২১টি ফ্ল্যাট আছে। দুপুরের পর থেকেই জেনারেটর দিয়ে জরুরিভাবে বিদ্যুৎ চালু রাখা হয়েছে।
‘১০০ লিটার তেল রিজার্ভ ছিল, সন্ধ্যায় তা ২০ লিটারে নেমেছে। আর কিছুক্ষণ পর জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে তেল নিতে এসে দেখি লম্বা লাইন। মনে হচ্ছে এই লাইনে থেকে তেল নেওয়া সহজ হবে না।’
মহাখালীর ক্রিসেন্ট ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার আরিফ হোসেন জানান, গ্রিড বিপর্যয়ের পর ডিজেলের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। তবে তার পাম্পে ডিজেলের কমতি নেই।
একই কথা জানান গুলশান সার্ভিস স্টেশনের ক্যাশিয়ার কবির হোসেন। তিনি বলেন, ‘দুপুরের পর চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। সবাই জেনারেটরের জন্য ডিজেল নিতে এসেছে।’
‘প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার লিটার যায়। আজ দুপুরের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি লিটার চলে গেছে।’ অধিকাংশই জেনারেটরের জন্য ডিজেল নিচ্ছে বলে জানান কবির। তিনি বলেন, ‘পূজার কারণে বুধবার ডিপো বন্ধ থাকার কথা। তবে পরিস্থিতির কারণে ডিপো চালু রাখলে তেল এনে বিক্রি করা যাবে।’
সায়েদাবাদের কাছে পেট্রোল পাম্প সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান সিএনজি অটোরিকশাচালক হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ নাই, অন্ধকার, তেল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কখন আসবে বিদ্যুৎ? কখন পাব তেল? আমরা এখন গভীর অন্ধকারে।’
মঙ্গলবার দুপুর ২টার কিছু সময় পর জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বড় এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। তবে ত্রুটি সারিয়ে রাতের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
কষ্ট বাড়িয়েছে হাসপাতালের রোগীদের
নানা সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।গকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর দিয়ে অতি জরুরি সেবাগুলো চালিয়ে নেওয়া হলেও ওয়ার্ডগুলোতে বাতি জ্বলছে না, চলছে না পাখা। ফলে গরম রোগীদের কষ্ট বাড়িয়ে তুলছিল।
সন্ধ্যায় ঢাকার মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে রোগীদের দুর্ভোগ।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের জেনারেটর দিয়ে জরুরি বিভাগ, অস্ত্রোপচার কক্ষ, আইসিইউতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চলছে। তবে ওয়ার্ডে কোনো বাতি জ্বলছিল না, পাখাগুলোও নিশ্চল।
ওয়ার্ডে মোবাইলের বাতি কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন রোগীদের স্বজনরা। হাতপাখা, কাগজ দিয়ে বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন রোগীদের।
২০/২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১২টি বৈদ্যুতিক পাখার মধ্যে তিনটি চলতে দেখা গেছে। বাতি সবগুলোও ছিল বন্ধ।
এই ওয়ার্ডে ভর্তি সাড়ে সাত বছর বয়সী ইমাম মাহাদী হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়ে ছিলেন। তাকে একটি মোটা কাগজ দিয়ে বাতাস করছিলেন তার মা মরিয়ম।
মরিয়ম বলেন, দুপুরে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর গরমের কারণে ইমাম মাহাদী বিছানায় থাকতে চাচ্ছে না। এজন্য ফ্লোরে শুইয়ে বাতাস করছেন তিনি। ‘ছেলে অসুস্থ্, এরমধ্যে কারেন্ট নাই। এমন গরম যে সে সিটের উপরে থাকতে চায় না। এজন্য নিচে নামায়া বাতাস দিতাছি।’
ওই ওয়ার্ডের ভর্তি নুরুল ইসলাম নামে একজন রোগী অভিযোগ করেন, তিনটি মাত্র ফ্যান চলায় যেসব বেডের উপর ফ্যান রয়েছে, তারা মোটামুটি স্বস্তিতে আছেন। বাকিদের কষ্ট হচ্ছে।
‘আমি অ্যাজমার রোগী। ঠা-া বা অনেক গরম দুইটা হইলেই আমার শ্বাসকষ্ট বাইড়া যায়। শ্বাসকষ্টে ঠিকমতো দম নিতে পারতেছি না। পোলারে পাডাইছি একটা চার্জার ফ্যান কিন্না আনতে।’
ফিরেছে বিদ্যুৎ
দেশের অর্ধেক এলাকায় বিদ্যুৎহীন দশা শুরুর চার ঘণ্টা পর টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চলে বিদ্যুৎ দ্রুত ‘রিস্টোর’ হচ্ছে জানিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায় (বিদ্যুৎ) সরবরাহ চালু হয়েছে।’
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের অর্ধেক অঞ্চলের বিদ্যুৎ চলে যায়।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গভবনের বিদ্যুৎ লাইনের সঙ্গে যুক্ত মানিকনগর সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ পুনরায় চালু করা গেছে বলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ পিজিসিবির তরফে জানানো হয়।
পিজিসিবির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা এবিএম বদরুদ্দোজা সুমন বলেন, ‘টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম জোনের প্রায় পুরোটা ও সিলেট জোনের পুরোটায় বিদ্যুৎ চলে এসেছে। কুমিল্লা জোন ও ঢাকা জোনের কিছু অংশ বাকি আছে।’
আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ চলে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ মুহূর্তের মধ্যে চলে যেতে পারে। তবে এটি ফিরিয়ে আনা একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেজন্য পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।’
ঢাকায় লোড বেশি হওয়ার কারণে সব লাইন সচল করতে কিছুটা দেরি হতে পারে জানিয়ে নসরুল হামিদ ফেইসবুকে লেখেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।’