জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেগেটিভ ১৪,৬৪৮ কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের দশ মাস

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দশ মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেগেটিভ (নেতিবাচক) ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
ব্যাংক আমানতের সুদহার বেড়ে যাওয়া এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা রকম বিধিনিষেধের কারণে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সরকারের সঞ্চয়পত্রের নিট ঋণ ২০২২-২৩ অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) শেষে ছিল নেগেটিভ ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ব্যাংকারদের দেয়া তথ্যমতে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা রকম বিধিনিষেধের কারণে এই স্কিমে গ্রাহকদের আগ্রহ কমেছে। এছাড়া বিনিয়োগের সুদহার কমছে। তারা জানিয়েছেন, মধ্যম আয়ের লোকজন এই খাতে বেশি বিনিয়োগ করত। গত দেড় বছরে টানা মূল্যস্ফীতির কারণে এসব গ্রাহকদের বিনিয়োগ কমে গেছে। খবর টিবিএস।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে সরকার ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পুনঃনির্ধারণ করেছে নেগেটিভ ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সরকার ঘাটতি বাজেট মেটাতে সরকার এই খাত থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট বকেয়া অর্থের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩.৫২ লাখ কোটি টাকা। যদিও ২০২৩-২৪ এর শুরুতে জুনে এর পরিমাণ ছিল ৩.৬০ লাখ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, সঞ্চয়পত্র ঋণ কমে যাওয়ার কারণে সরকার এই অর্থবছরের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অনেকটা কমিয়ে দেয়ায় ঋণও কম নিয়েছে। এই সময়ে যাদের বিনিয়োগের মেয়াদ শেষে হয়েছে তাদের আসল ও সুদসহ ফিরিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আরও বেশ কিছু কারণও রয়েছে। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার অনেক বেড়েছে, এছাড়া গ্রাহকরা সরাসরি ট্রেজারি বিল বন্ডেও বিনিয়োগ করতে পারছে। সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রে আগের মতো গ্রাহকরা পেনশনের পুরোটা বিনিয়োগ করতে পাড়ছে না। এছাড়া আগে নামে-বেনামে গ্রাহকদের বিনিয়োগ ছিল। এখন সকল বিনিয়োগ করতে টিআইএন সার্টিফিকেট (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দিতে হচ্ছে যার কারণে বিনিয়োগ অনেকটা কমে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এনআইডি ও টিআইএন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা শুরু হয়। ফলে যাঁরা আগে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তাঁদের অনেকেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নতুন করে আর এতে বিনিয়োগ করেননি।
এছাড়াও উৎসে কর কর্তন বৃদ্ধি, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হ্রাস, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার বৃদ্ধি এই খাতে গ্রাহকদের অনীহা বাড়িয়েছে বলে ঐ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ৪.৭ বিলিয়ন ঋণ শর্তের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণবিষয়ক শর্তও রয়েছে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সঞ্চয়পত্রকে সরকারের মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের এক-চতুর্থাংশের মধ্যে রাখতে হবে।