জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও ২০ বছর লাগবে

জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল

সুপ্রভাত ডেস্ক  »
আগামী ২০ বছরে তিন ধাপে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড) নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার জন্য মাস্টারপ্ল্যান উপস্থাপন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় ৩৩ হাজার ৮০৫ একর জমির ওপর বিস্তৃত দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল এনএসইজেড নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
গত বুধবার ঢাকায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘এতদিন কোনো সুনির্দিষ্ট পর্যায়ক্রমিক পরিকল্পনা ছিল না। মাস্টারপ্ল্যানে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম ধাপের (ফেইজে) কাজ শেষ হবে আগামী ৫ বছরে, দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হবে আগামী ৬ থেকে ১০ বছরে; আর তৃতীয় ধাপের কাজ শেষ হবে ১১ থেকে ২০ বছরে।’
প্রথম পর্যায়ে আগামী পাঁচ বছরে ১৭ হাজার ৩১৩.৫৮ একর জমির ওপর বিস্তৃত এনএসইজেডের মিরসরাই অঞ্চলের কাজ সম্পন্ন করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে দশম বছরের মধ্যে সোনাগাজীর ১১ হাজার ২০.৫ একর এলাকার কাজ করা হবে। তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ে এগারোতম থেকে বিশতম বছরে সম্পন্ন হবে সীতাকুণ্ড অঞ্চলের কাজ।
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ন্যাশনাল ওয়ার্কশপ অন রিজিওনাল এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাসেসমেন্ট ফর দ্য ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনমিক জোন (মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, অ্যান্ড ফেনী ইজেড)’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় মাস্টারপ্ল্যানটি উপস্থাপন করে বেজা।
কর্মশালায় অংশীজনরা এনএসইজেডের পরিবেশ রক্ষায় আঞ্চলিক বায়ু পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেন।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার দরকার নেই। আমাদের কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ফোকাস করে কাজ করতে হবে—যেখানে বিনিয়োগকারী ও কর্মী যারা আছেন, তাদের যেন সব সুবিধা আমরা দিতে পারি।’ খবর টিবিএস।
আশিক আরও বলেন, ‘একটি সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) স্থাপন করা হবে। সিইটিপি ছাড়া সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি সম্ভব নয়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও পরামর্শমূলক সভা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সভার পর আমরা কাজ শুরু করব।’
একজন বিনিয়োগকারীর প্রসঙ্গ টেনে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে এক বিনিয়োগকারী বলেছেন, ২০১৮ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি নেওয়ার সময় তাকে বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও সেটা দেয়া হয়নি। আমাদের একটা ফোকাস থাকবে—বিনিয়োগকারীকে আমরা যা ওয়াদা করব, সেটা নির্ধারিত সময় পূরণ করব।’
পরিবেশগত ও সামাজিক গাইডলাইন মেনে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইকোলজিক্যাল মডার্নাইজেশন সূত্র মানা হবে। আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল ধাপে ধাপে করব। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চলকে আর অনুমোদন বা প্রি—কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স দেওয়া হবে না।
বেজা এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা অনেক সভা ও আলোচনা দেখেছি, কিন্তু সেসব থেকে উঠে আসা সুপারিশ ও পরামর্শ বাস্তবায়ন করা হয়নি। বছরের পর বছর ধরেই এমনটা চলে আসছে। আমরা কিছু সুপারিশ করি, চমৎকার ধারণা বলে সেগুলোর প্রশংসা করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলো আর বাস্তবায়ন করতে পারি না।
‘আশা করি, আজকের আলোচনার পরিণতি অতীতের আলোচনাগুলোর মতো হবে না। আমি আমার টিমের জন্য অত্যন্ত স্পষ্ট একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে চাই। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে কারা থাকবে সেটি আমরা ঠিক করে দেব, যাতে জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।’
মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোদমে চালু হওয়ার পর প্রতিদিন ৩ হাজার ২৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ৭০০ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের প্রয়োজন হবে।
পেপার প্রেজেন্টেশনে ইকিউএমএস কনসাল্টিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফরহাদ ইকবাল বলেন, শিল্পাঞ্চলটি পুরোদমে চালু হওয়ার পর প্রায় ১,০৩৩ এমলডি (দৈনিক মিলিয়ন লিটার) পানি প্রয়োজন হবে। এখন ১০০ এমএলডি সক্ষমতার একটি পানি পরিশোধনাগার ও পানি সরবরাহ পাইপলাইন নির্মাণ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। পানির চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম ওয়াসার সঙ্গে যৌথভাবে সরকারি—বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বিনিয়োগ করে কাজ করছে বেজা।
অংশীজনরা সুপারিশ করেন, আঞ্চলিক পর্যবেক্ষণ তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে শিল্প নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ বিবেচনা করতে হবে, যা পরিবেশগত ছাড়পত্র বা এ অঞ্চলে নতুন শিল্প স্থাপনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এছাড়া পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক পানি মান পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া প্রণয়ন ও বাস্তবায়নও করতে হবে। কর্মস্থল ও বাসস্থানের মধ্যে দূরত্ব বিবেচনায় শ্রমিকদের জন্য একটি টাউনশিপ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের তাগিদও দেওয়া হয়েছে সুপারিশে। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগব্যবস্থা ও অন্যান্য সামাজিক অবকাঠামোর যথাযথ উন্নয়ন বাস্তবায়নের সুপারিশও করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দা মাসুমা খানম বলেন, ‘যথাযথভাবে ইটিপি তৈরি করা গেলে দূষণ কমানো যাবে।’
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, ‘পরিবেশগতভাবে টেকসই সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। আজকের আলোচনায় এ বিষয় উঠে এসেছে। এগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।’
বেজার নির্বাহী সদস্য সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়ন করব। পরিবেশ সুরক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব। এনএসইজেডের ২২ শতাংশ জায়গায় কোনো কারখানা করা হবে না। এটা গ্রিন জোন হবে; এখানে গাছ থাকবে, লেক থাকবে।’