সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »
অভিষেক টেস্টে ১১২ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৭১ রান দিয়ে শুরু। তারপর এক টানা প্রায় ৭-৮ বছর টেস্টে বাংলাদেশের টপঅর্ডারে নিয়মিত ভালো খেলেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন। শুধু ভালো খেলা নয়। বাংলাদেশ যখন ‘টেস্ট শিশু’, তখন প্রতিপক্ষর বাঘা বাঘা বোলারদের তোপের মুখে ভয় না পেয়ে পাল্টা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন সুমন। নামের পাশে ৫০ টেস্টে ৩ সেঞ্চুরির সঙ্গে ২৪ হাফসেঞ্চুরি দিচ্ছে তারই প্রমাণ। তিন নম্বরে ব্যাট করা সুমনের ফ্রি স্টোক প্লে’র সঙ্গে একদম নিচের দিকে খালেদ মাহমুদ সুজন ও মোহাম্মদ রফিকরা হাত খুলে খেলে দলের স্কোরবোর্ডকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রথম কয়েক বছর। তামিম ইকবালের পর নতুন বলে প্রতিপক্ষ দলের ফাস্ট বোলারদের রক্তচক্ষুর তোয়াক্কা না করে সাহস নিয়ে ব্যাট চালানোর অনেকদিন কেউ ছিল না। অবশেষে দেখা মিললো এক সাহসী তরুণ জাকের আলী অনিকের। যার সামর্থ্য আছে প্রতিকুল অবস্থায় খেঁই না হারিয়ে বুক ভরা সাহস ও পূর্ণ আস্থায় আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার। গেল মঙ্গলবার শেষ দিকে জাকের আলীর ১০৫ বলে ৫ ছক্কা আর ৮ বাউন্ডারিতে ৯১ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস আশার আলো জ্বালিয়েছিল ভক্তদের হৃদয়ে। তিনি দেখিয়েছেন খেলার পজিটিভ অ্যাপ্রোচগুলো কেমন হয়। বুঝিয়েছেন প্রতিকূল অবস্থায় লড়াই-সংগ্রাম করে প্রতিপক্ষের ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধেও হাত খুলে উইকেটের চারিদিকে বড় শট খেলার ক্ষমতা রাখেন তিনি। শুধু শেষ দিকে বোলারদের সাথে নিয়ে একা দলকে এগিয়ে দেয়ার সামর্থ্যের প্রমাণও দিয়েছেন জাকের আলী। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, জাকের আলীর ব্যাটিং প্রতিভার প্রথম স্ফুরণ বুঝি এবারই ঘটেছে। এর আগে জাতীয় লিগে চাপের মুখে বেশকিছু বড় ইনিংস আছে জাকেরের। এ বছর ‘এ’ দলের হয়ে পাকিস্তানের ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে ৪ দিনের ম্যাচে ১৭২ রানের বড় ইনিংসও খেলেছিলেন তিনি। ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনীতে জাকের আলীকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। তাই ডানহাতি ব্যাটারের বুক চিতানো ব্যাটিং দেখে অবাক হননি তিনি। সুজনের ধারনা, জ্যামাইকায় সবাই যে জাকের আলীকে দেখেছে, সেটা কোনো নতুন বা ভিন্ন জাকের আলী নন। জাকেরকে সতীর্থ মোহাম্মদ রফিক ও নিজের চেয়ে বেশি মেধাবী ও কার্যকর ব্যাটার আখ্যা দিয়ে সুজন বলেন, ‘জাকের আলী আমার ও রফিকের চেয়ে ভালো ক্রিকেটার। অনেক বেশি রেট করি তাকে।’
সুজনের মূল্যায়ন, ‘জাকের আলী যেকোনো পজিশন আর পরিবেশ-পরিস্থিতিতে খেলার মতো ক্রিকেটার। দলের প্রয়োজন পড়লে উইকেটে দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে থাকতে পারে। ১০০ বল খেলে ২০-২৫ রান করতে পারে। আবার দলের দরকার পড়লে হাত খুলে মারতে পারে। সবচেয়ে বড় গুণ হলো- সে রক্ষণাত্মক ভঙ্গির পাশাপাশি আক্রমণাত্মকও খেলতে পারেন। আমি ওকে অনেক দিন ধরে দেখি। দারুণ পরিশ্রমী ছেলে। প্রাণপণ চেষ্টা করে।’
সুজনের প্রত্যাশা, জাকের আলীর ব্যাট সবে আলো ছড়াতে শুরু করেছে। আগামী দিনে তিনি আর ভালো ব্যাটিং করবেন। এ বিষয়ে সুজনের শেষ কথা, ‘সে পরিশ্রমী ছেলে। আমি বিশ্বাস করি, এটা কেবলই শুরু। জাকের আলী অনেক দূর যাবে। এমন ইনিংস অনেক খেলবে দেখবেন। এর চেয়ে ভালো ও লম্বা ইনিংস খেলবে। বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতাবে সেটাই বিশ্বাস করি। সেই শুভকামনাও করি।’