মামুন মুস্তাফা :
আমাদের উত্তরবাড়িটার পুবকোণে জমেছিলো একপ্রস্থ মেঘ। ঠিক ওখানেই ললিতাদের বাড়ি। কালিদাসের মেঘদূতকে পিছে ফেলে ললিতা দুরন্ত মেঘের কাছে পাঠালো বার্তা : কুমারীজন্ম তার তছনছ করে দিলো উত্তরবাড়ির অবোধ ছেলেটা। থেমে থেমে মেঘের নিনাদ। অভিমানী নারীর মতো ললিতার দেহ চিৎ হয়ে পড়ে আছে খোলা ছাদে। তার মুখের ওপর খোঁপা থেকে বিচ্যুত কয়েকটি চিকন চুল ইলিশবৃষ্টিতে লেপ্টে ছিলো কিছুক্ষণ; আকাশের হাহাকার নতভার শস্যের মতন ললিতার দেহে ঝরে।
তখন রাত্রির কোরক ভেঙে বেরিয়ে আসে আরেক রাত্রির যাম। কারা যেন নামিয়ে নিয়ে গেলো ললিতার দেহ দক্ষিণের জানালায়। শুধু বৃষ্টিপতনের শব্দ বাজে। কালো কালো মেঘের নিনাদে গাঢ় হয় উত্তরবাড়ির ঘুম। পুরুষগুলো মেয়েদের শরীর খুঁড়ে গড়ে অনন্ত রাতের নিশিযাপন। আমি কেবল স্বপ্নে জেগেছি ললিতার গোপন আশ্রয়ে।
‘প্রেম হয় হিংসা হয় নিষ্ঠুরতা ধিকি-ধিকি জ্বলে’;Ñ উত্তরবাড়ির মেয়েমানুষগুলো খুশি হয় যখন পড়শীরা জানে ললিতার দেহে বিষ ছিলো। গুঁড়ি-গুঁড়ি ইলিশবৃষ্টি ধুয়ে নিতে চায় ললিতার সকল যাতনা। আমারও ভোরের শুরু সেই মেঘের গর্জন শুনে! ললিতা কি আমাকে দেখেছিলো? অথচ গোপন হ্রদের জল খুঁড়ে তুলি তার আলুথালু দেহের বৃষ্টিস্নানে।
‘ওড়ে হাল্কা মেঘের দিন’। বাবার ভাঙা টেপরেকর্ডারে বাজে এসডি বর্মণ। আমাদের উত্তরবাড়ির অব্যর্থ মেয়েমানুষগুলো সফল রতিক্রিয়া শেষে ফিরে আসে সংসারের খুব কাছাকাছি। জটিলতা ঘন হয় যখন সন্ধ্যার বাকি ইতিহাসে ললিতাকে গোর দিলো ওরা বৃষ্টিধোয়া চিতার বিবরে। উত্তরবাড়ির অবোধ ছেলে শিখে যায়ÑÑ‘এ সংসার মাটির জ্যামিতি’ÑÑথাকে কিছু নুনধরা মাটির নাশকতা।