৫ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে মেয়রের
ভূঁইয়া নজরুল :
জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করতে না পারার আক্ষেপ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের। এ কথা প্রচলিত, এ জলাবদ্ধতা ইস্যুতেই ২০১০ সালে টানা ১৬ বছরের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করেছিলেন বিএনপির প্রার্থী এম মনজুর আলম। আবার একই ইস্যুতে ২০১৫ সালে নগরবাসী আস্থা রাখলেন আ জ ম নাছির উদ্দীনের উপর। এমনকি নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল জলাবদ্ধতা নিরসনের অঙ্গীকার। কিন্তু পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালন শেষে তা পূরণ করতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করলেন তিনি।
কেন এই আক্ষেপ?
আগামী ৫ আগস্ট পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলে নির্বাচনে জয়লাভ করলেও শপথ গ্রহণ করেন ৬ মে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২৬ জুলাই এবং প্রথম সাধারণ সভা করেন ৬ আগস্ট। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী প্রথম সাধারণ সভার তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর বিবেচনায় আনা হয়। সেই হিসেবে আগামী ৫ আগস্ট শেষ হচ্ছে পাঁচ বছরের মেয়াদকাল। এ সময়ের মধ্যে তিনি কি কি করেছেন এবং কি কি করতে পারেননি জানতে চাইলে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘নগরীকে শতভাগ বিলবোর্ডমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলেছি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বাড়াতে এবং আবর্জনা দূরীকরণে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। একইসাথে রাস্তাঘাটে যাতে ময়লা আবর্জনা পড়ে না থাকে সেজন্য ১৩৫০ স্পটের ডাস্টবিন কমিয়ে ৬০০ তে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্জ্য সংগ্রহে শৃঙ্খলা আনা হয়েছে। একইসাথে নগরীর প্রথান সড়কগুলো এলইডি লাইটের মাধ্যমে আলোকায়ন করা হয়েছে, আধুনিক পশু জবাইখানা করা হয়েছে, শহরের বাইরে কুলগাঁও এলাকায় আধুনিক বাস টার্মিনাল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরীর রাস্তাগুলো পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। একইসাথে সবুজায়নের মাধ্যমে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।’
আক্ষেপ কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মেয়র হিসেবে আমি শতভাগ সফল। শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা দুর্ভোগের সমাধান করতে পারিনি।’
কিন্তু নগরবাসী তো জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য আপনাকে নির্বাচিত করেছিল এবং আপনার নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল। এ প্রশ্নের জবাবে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চীনা একটি টিম দিয়ে ১০ মাস ধরে ডিটেইলড স্টাডি করে প্রকল্প তৈরিও করেছিলাম। কিন্তু এর ফাঁকেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেয়। জলাবদ্ধতা নিরসন কাজ সিটি করপোরেশনের, তাই প্রকল্পটি সিটি করপো রেশনেরই করার কথা ছিল। এককথায় আমাদের প্রকল্পটি ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারা কি কাজটি করতে পেরেছে? তারা এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিয়েছে। তাহলে তো বোঝাই গেল তাদের সক্ষমতা নেই।
তিনি আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন কাজ করে আসছিল এবং সক্ষমতাও রয়েছে। এখন সিডিএ’র দুটি প্রকল্পের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের কোনোটি শেষ হয়নি এবং জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকেও মুক্তি মেলেনি। তাই মেয়াদ শেষে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে না পারার আক্ষেপ কাজ করছে।
কিন্তু নগরীর নালা ও ড্রেনগুলো তো সিটি করপোরেশনের আওতাধীন। এই প্রশ্নের জবাবে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন,‘ আমার আওতায় যা ছিল তা আমি করেছি। নগরীর নালাগুলোকে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে, নালার উপরে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন পায় সিডিএ। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। গত জুনের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। তবে প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে আবারো দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু করছে। অপরদিকে প্রায় ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১২টি খালের মুখে রেগুলেটর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার প্রকল্পে ২৩টি রেগুলেটর রয়েছে।