দেশে যতগুলো উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হয়েছে বা হওয়ার পথে তার অধিকাংশই নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি। এতে সময়ক্ষেপণ তো হয়-ই তার ওপর বাড়ে প্রকল্পের ব্যয়। যেমন গত অর্থবছরের শেষে অর্থাৎ জুন মাসে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এর ফলে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ থাকা ৫৮০ কোটি টাকা ছাড় করছে না মন্ত্রণালয়। তাই এ বছর এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এদিকে আরডিপিপি একনেকে অনুুমোদন না পেলে প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো যাবে না।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের আকার বৃদ্ধি করে ১০ হাজার ৪২০ কোটি টাকার সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করে সিডিএ। তবে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি প্রস্তাবিত ব্যয় কমিয়ে ৮ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হলে বর্ধিত ৩ হাজার ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। শেষে বর্ধিত অর্থের ৫০ শতাংশ সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি টাকা ২০ বছর মেয়াদে সরকার থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্তে অনুমোদন দেয়। এরপর গত মে মাসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ অর্থ সরকারি তহবিল থেকে দেয়ার জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়। তবে অর্থ বিভাগ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত দেয়, বর্ধিত অর্থের ৫০ শতাংশ সরকারি তহবিল থেকে, ২৫ শতাংশ সিডিএ’র ফান্ড থেকে এবং ২৫ শতাংশ সরকার থেকে ঋণ নিয়ে সিডিএ’কে পরিশোধ করতে হবে।
এখন এ প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদন না পেলে প্রকল্পটির কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য অর্থ সংকটে এখনও প্রকল্পের কাজ থমকে আছে। প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খালের ২০টির কাজ এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে শহরের সিংহভাগ এলাকার পানি নিষ্কাশনের চাক্তাই খালও রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরু করা না গেলে শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর হবে না সেটা বলাই বাহুল্য।
পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএ’র মেগা প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এখন এ পর্যায়ে এসে যদি কাজ বন্ধ হয়ে যায় অথবা অর্থ যোগাড় করতে বিলম্ব হয় তাহলে জনভোগান্তি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থ যোগান দেওয়া কিছুটা কঠিন তারপরও বলতে হবে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হওয়া দরকার। কারণ বছরের পর বছর নগরবাসী জলাবদ্ধতায় কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করছে। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে অর্থ ছাড়ে আন্তরিক হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ