গতকাল বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে (২২ এপ্রিল) জলবায়ু বিষয়ক বৈশ্বিক শীর্ষক ভার্চুয়াল সম্মেলন শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের ৪০ জন শীর্ষ নেতা এই ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল এই শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই জলবায়ু সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জন কেরি গত ৯ এপ্রিল এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন। জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন ‘গ্লোবাল লিডারস সামিট’ এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর (ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম) সভাপতি হিসেবে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা ৪৭টি দেশের মুখপাত্র হিসেবে ন্যায্যতার পক্ষে ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সম্মেলনে ৪টি বিষয়ে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার দেবে। এই বিষয়গুলো হচ্ছে অবিলম্বে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার লক্ষ্য পূরণ, জলবায়ু তহবিলের ১০০ কোটি বিলিয়ন ডলার সমানভাগে ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজন সক্ষমতার জন্য বরাদ্দ করা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সৃজনশীল বিনিয়োগ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বিনিময়।
কার্বন নিঃসরণ কমাতে শিল্পোন্নত দেশগুলির ভূমিকা আশানুরূপ নয়, বরং তারা জলবায়ুর ক্ষতিকর দিকগুলির প্রতি মনোযোগ না দিয়ে দেশীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছে আর যে সব দেশ কার্বন নিঃসরণে একেবারেই কম অথবা স্বল্প নিঃসরণ ঘটাচ্ছে সে সব জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভার বহন করতে হচ্ছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যে পরিমাণ কমিয়ে আনার কথা তার প্রতি বিশ্বস্ত না থেকে বরং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়েই চলেছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলি।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, বৈশ্বিক কার্বন নিঃস্বরণে বাংলাদেশের অবদান শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ কিন্তু বাংলাদেশ আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির একটি। এতদসংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের জোট আইপিসিসির পঞ্চম প্রতিবেদনে বলছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে পড়বে। এমনিতেই প্রতি বছর নানা ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এটি বাংলাদেশের কৃষি, জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা যা দেশের পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান, উন্নয়নের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে।
আগামী নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত (কপ-২৬) সম্মেলনের আগে বিশ্ব নেতাদের এই শীর্ষ সম্মেলন কার্বন নিঃসরণ ও জীবাশ্ম জ্বালানি কমানো, জলবায়ু তহবিলের ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ ব্যবহার, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে ও ধরিত্রীকে রক্ষায় নীতিগতভাবে সমঝোতাপূর্ণ অবস্থানের পক্ষে থাকবেন বলে আমরা আশা করি।
বর্তমান করোনার মহামারী থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকাকে বৈশ্বিক গণ পণ্য হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানান ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার’ এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশ যাতে টিকা পেতে ন্যায্যতা ও সমান অধিকার পায় তা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘকে নিশ্চিত করতে হবে। মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে এই নীতিবোধ জরুরি।
ধরিত্রীর প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের নির্বিচার আহরণ, ধ্বংস অবশ্যই আমাদের পরিহার করতে হবে প্রকৃতির রুদ্র প্রতিশোধ থেকে বাঁচতে। উৎপাদন ব্যবস্থা সবুজ ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মানুষ ও প্রকৃতির ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান মানবজাতির অস্তিত্বের স্বার্থেই প্রয়োজন।
মতামত সম্পাদকীয়