জলবায়ু পরিবর্তন : শিশুরা পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষায়

২০২৪ সালে চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির কারণে বাংলাদেশের তিন কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সারা বিশ্বে ২০২৪ সালে তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা ও খরার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে ৭৭টি দেশের অন্তত ২৪ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ছিল দক্ষিণ এশিয়া।
ইউনিসেফ বাংলাদেশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘লার্নিং ইন্টারাপটেড: গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আবহাওয়াজনিত শিশুদের শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। এতে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির কারণে দফায় দফায় স্কুল বন্ধ দিতে হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেছেন, ‘চরম আবহাওয়াজতি ঘটনাবলির তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা বারবার আঘাত হানার প্রবণতাও বেড়েছে। জলবায়ু সংকট এটাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এগুলোর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের শিশুদের শিক্ষার ওপর এবং শিশুরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চরম তাপমাত্রা ও অন্যান্য জলবায়ুজনিত সংকট শুধু শিশুদের স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত করে না, বরং এর কারণে শিশুদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বড় সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকলে শিশুদের—বিশেষ করে কন্যাশিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার সুযোগ বেড়ে যায়, বেড়ে যায় পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে বাল্যবিবাহের ঝুঁকির হার।’

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের এপ্রিল ও মে মাসে দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ শিশুদের পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) ও হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে, ফলে সারা দেশে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলে ছুটি দিতে বাধ্য হয়। মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বেশ কিছু জেলায় শিশুদের স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এরপর জুনে হয় তীব্র বন্যা, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশুদের শিক্ষার ওপর। বন্যায় সারা দেশে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল ৭০ লাখ।

বন্যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সিলেট জেলায়। তীব্র বন্যায় সেখানে ব্যাপকভাবে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়েছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের হিসেবে গত বছর ১২ মাসের মধ্যে জলবায়ুজনিত কারণে সিলেট অঞ্চলে শিশুরা সব মিলিয়ে আট সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর—প্রতিটি জেলায় শিশুরা ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুল দিবস হারিয়েছে।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শিশুরা পরস্পর–সম্পর্কিত দুটি সংকট- জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান শিখন দারিদ্র্য—এর সম্মুখভাগে রয়েছে। এর ফলে তাদের টিকে থাকা ও ভবিষ্যৎ দুটিই হুমকির মুখে পড়ছে।
এসব বিষয় নিয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার সময় হয়েছে। দেশে এবং দেশের বাইরে এ পরিস্থিতি তুলে ধরা দরকার। উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে জলবায়ু তহবিলের বিষয়ে সরকারকে আরও সোচ্চার হতে হবে। নতুবা আগামী প্রজন্ম নিশ্চিতভাবে ধ্বংসের মুখে পড়বে।