জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রাণ–প্রকৃতি থেকে শুরু করে এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও ছাপ ফেলছে। এ বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ব্যয় এখন জীবনযাপনের নানা উপকরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ও পরিবহনের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
যেমন, প্রচণ্ড গরমের কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। ফ্যান ও এসি বেশি সময় ধরে চালানোর ফলে বিদ্যুৎ বিলও বেশি আসছে। আবার বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর বা আইপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে। অনেকে সাধারণ গণপরিবহন এড়িয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস বা ট্রেনে যাতায়াত করছেন।
খাবার সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটর কিংবা স্বস্তি পেতে ফ্যান বা এসি কেনার পেছনেও মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হচ্ছে। আবার প্রচণ্ড গরমে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এই গরমের অস্বাভাবিকতা আরও বাড়বে, যা জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে।
কয়েক বছর ধরে গরমের সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এবার থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে এবং ভ্যাপসা গরম বিরাজ করছে, যা ডেঙ্গুর এডিস মশা বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ।
৭৬ বছরের তাপপ্রবাহের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালে টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। আবার ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু ২০২৪ সালে পরিস্থিতি ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। ওই বছর টানা ২৬ দিন ধরে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।
তাপপ্রবাহের এমন ধরন নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেছেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গতবারের মতো টানা তাপপ্রবাহ আগে কখনোই হয়নি। এটি ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুকের মতে, গত বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ৪৩ বছরের মধ্যে যশোরে তাপপ্রবাহের দিন সবচেয়ে বেশি ছিল, এরপরই ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা।
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এমন তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো হলো—উপমহাদেশীয় উচ্চ তাপবলয়, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, এল নিনোর সক্রিয়তা এবং বজ্রমেঘের কম সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সবুজ খেলার মাঠ বা খোলা জায়গার অভাব এবং সহজলভ্য ও বিশুদ্ধ পানির অপ্রতুলতাও তাপজনিত সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। এর জন্য সবচেয়ে কার্যকর সহায়তা হতে পারে ভালো মানের বাসস্থান ও উন্নত কর্মপরিবেশ, যাতে তাপের প্রভাব কিছুটা হলেও কমে। এসব স্থানে পরিষ্কার পানি ও স্যানিটেশন সুবিধাও উন্নত করা দরকার।