আমাদের দেশে ভূমি সংক্রান্ত বেচাকেনা, নামজারি, খতিয়ানভুক্তি, ওয়ারিশ নির্ধারণ-এসব ক্ষেত্রে মারাত্মক অনিয়ম, দুর্নীতি, মামলা বিদ্যমান দীর্ঘদিন থেকে, এতে বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণের ভোগান্তি চূড়ান্ত হয়। জায়গা জমি সংক্রান্ত বিবাদ, মামলায় খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমলা কর্মচারীদের ঔপনিবেশিক আমলের মানসিকতা এবং প্রচলিত আইনকানুন নিয়ে জটিলতার আজো নিরসন হয়নি। ভূমি সংক্রান্ত এসব জটিলতা এড়াতে নানাভাবে তথ্যপ্রযুক্তির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সব ভূমি অফিসের ৪ কোটি ৩০ লাখ রেকর্ড অনলাইনে চলে এসেছে।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জমি নিবন্ধনের (রেজিস্ট্রেশন) সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে নামজারি হবে, নিবন্ধনের আগে সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে জমির তথ্য জেনে নেবেন সাব রেজিস্ট্রার। একইভাবে নিবন্ধনের পর সাবরেজিস্ট্রার তথ্য উপজেলা ভূমি কমিশনারকে জানিয়ে দেবেন। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নামজারি করবেন। দুটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি অফিসের মধ্যে জমি নিবন্ধন ও নামজারির কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের উপরোক্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। বর্তমানে ভূমি-নিবন্ধনের কাজটি হয় আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আর নামজারির কাজটি হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে। দুটি পৃথক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য ছিল, দীর্ঘসূত্রিতাও ছিলো। আর জনগণের হয়রানি ও দুর্ভোগ ছিলো সীমাহীন। গ্রামের সাধারণ মানুষ জমি-জমার আইনকানুন, নানা ধরণের প্যাঁচ জানেন না। এ সুযোগ নেয় ভূমি সংক্রান্ত অফিসগুলির টাউট ও দালাল। অর্থ তো যায়ই, সেই সাথে কাজ সম্পন্ন করতে এ অফিস, ওই অফিস ছুটোছুটি করতে তাদের প্রাণান্ত হয়।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানানোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দুই অফিসের মধ্যে একটি সফটওয়্যার থাকবে যা দুই অফিসের মাধ্যমে পরিচালনা করা যাবে। নিবন্ধনের পর উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি তা ফেলে রাখতে পারবে না। তাঁকেই জমির রেকর্ড সংশোধন করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশের ১৭টি উপজেলায় এই কাজ শুরু হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ১ বছরের মধ্যেই তা পুরো দেশে বাস্তবায়ন করা যাবে। উত্তরাধিকার হিসাবে পাওয়া সম্পত্তির বণ্টননামা ও নামজারির কাজটিও দ্রুত সময়েলর মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে মর্মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
তৃতীয় লি্েঙ্গর মানুষেরাও যেন উত্তরাধিকার সম্পত্তি ঠিকমতো পান তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মামলা জায়গাÑজমি সংক্রান্ত; পারিবারিক এবং সামাজিক বিরোধের উৎস ও এসব মামলা। আমাদের জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে বছরের পর বছর মামলা চলতে থাকে। বংশানুক্রমে তা চলে। গল্পেÑউপন্যাসে এই ধরণের মামলার অনেক করুণ পরিণতির কথা এসেছে। এই সুযোগে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলির কিছু অসৎ কর্মকর্তাÑকর্মচারী, টাউটÑবাটপার, দালাল এবং তথাকথিত সমাজপতিদের পোয়াবারো হয়েছে। এ ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
আমরা মনে করি, জমি নিবন্ধন ও নামজারি দ্রুত সময়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করার এই সিদ্ধান্ত জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে। সামগ্রিক ভূমি প্রক্রিয়া সহজ করা হলে এবং তা প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করা গেলে দুর্নীতি কমবে। মামলা জটও কমে আসবে। এতে পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
মতামত সম্পাদকীয়