নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘দেশে একদলীয় শাসনক্ষমতা যেন কেউ কোনদিন প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে সেজন্যই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেয়া নির্বাচনোত্তর জাতীয় সরকার ও দ্বি-কক্ষ সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি।’
গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম ক্লাবে বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন এসব কথা বলেন। ‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে বিএনপির মিডিয়া সেল।
তিনি আরো বলেন, একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠন এখন সময়ের দাবি। এ জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে অপসারণ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদব্যবস্থার ধারণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, বিএনপি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, রাষ্ট্রকাঠামোতে গুণগত পরিবর্তন চায়। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ আলোকে বিএনপি রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক সংস্কারের পরিকল্পনা করছে। এজন্যই তারেক রহমান গণতন্ত্রকামী সকল দল ও শক্তিসমূহকে নিয়ে নির্বাচনোত্তর একটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় সরকার গঠন এবং জনগণের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্বশীল দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছেন।
সভায় বিশিষ্টজনরা বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার যুগোপযোগী সংস্কারে নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে একমত পোষণ করে নানা ধরনের পরামর্শ দেন।
মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
মূল প্রবন্ধে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, শত শত ভাই বন্ধু সহকর্মীর সন্তান পিতার খোঁজে কান্নাভেজা চোখে আকুতি জানাচ্ছে, আমার পিতা কি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন? গুম হওয়া পিতা কিংবা ভাইয়ের জন্য কোমলমতি সন্তান-স্বজনের এমন আর্তনাদই প্রমাণ করে, বছরের পর বছর ধরে বিনাভোটে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা চলমান ফ্যাসিবাদি শাসনের ভয়াবহতা।
তিনি বলেন, দেশে আজ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে বিনাভোটের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী করার জন্য গোয়েন্দা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে গোপন গুম কেন্দ্র ও টর্চার সেল বানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র রূপান্তরমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারের লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বড় দলতো আছেই, সঙ্গে ছোট দলের মেধাবী ও প্রাজ্ঞদের নিয়ে সরকার গঠন করা হবে। দেশে অনেক ছোট-বড় দল আছে। এসব দল বা দলের নেতারা একেবারে আম জনতার কাছে তেমন পরিচিত নয়, কিন্তু মেধাবী এবং প্রাজ্ঞ। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯০ আসন পাবে দাবি করে রুমিন ফারহানা বলেন, গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। বড় আকারের একটি রাষ্ট্র মেরামতের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিএনপি যেহেতু অংশীদারিত্বে বিশ্বাস করে, বহু মত, বহু মানুষের পক্ষে কথা বলে সুতরাং বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায় তাহলে তারা একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে, বিএনপি মনে করে সেসব মেরামত বিএনপির একা করা সমীচীন হবে না। যদিও বিএনপি চাইলে করতে পারে। কিন্তু করবে না। কারণ বিএনপি বহুদলের বিশ্বাস করে। এই জন্য জাতীয় সরকারের কনসেপ্ট নিয়ে এগোচ্ছি।
আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক ও মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গণি চৌধুরী, রুমিন ফারহানা এমপি, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, চবি রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হায়াত হোসেন, চিসিৎসক অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার, অধ্যাপক আবদুল আলিম, ড. ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, মফিজুল হক ভুঁইয়া, অধ্যাপক এস এম নসরুল কদির, অ্যাডভোকেট এনামুল হক, সাংবাদিক মো. শাহনওয়াজ, ইঞ্জি. সেলিম জানে আলম, ডা. কামরুন্নাহার দস্তগীর ও অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।