যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় ভার্চুয়াল লিডার্স সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার পর জো বাইডেনের এ উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি প্রশমনে বিশ্বনেতৃবৃন্দকে একসাথে কাজ করার সুযোগ করে দেবে বলে পরিবেশবিদগণ আশা প্রকাশ করেন। গত শুক্রবার জন কেরির সাথে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন জলবায়ু পরিবর্তন কূটনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার করবে বলে মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা কার্বন নিঃসরণকারী নয় অথবা এক্ষেত্রে যাদের অবদান নগণ্য তারাও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে জলবিদ্যুৎ স্থাপনে আগ্রহী; দেশে ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচির কথাও উল্লেখ করেন তিনি এ আলোচনায়। যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলি অন্যদের সাথে অংশীদার হয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে জন কেরি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
বাংলাদেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ এর টিকা দিতে পারে বলেও জন কেরি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপকালে বলেছেন মর্মে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠককালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি বলেন, রোিহঙ্গা সমস্যা সমাধানের দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বাংলাদেশের একার নয়। তিনি মিয়ানমারের অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতিকে বিশ্বের জন্য একটি জটিল সংকট উল্লেখ করে বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র যাতে ফিরে আসে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলির প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা কিন্তু তা তারা দিচ্ছে না। এই তহবিলের ৫০ শতাংশ অভিযোজন এবং ৫০ শতাংশ ঝুঁকি প্রশমনে বরাদ্দ দেওয়া হোক, বাংলাদেশ তা চায় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নানা ফোরামে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে এবং তাদের জন্য তহবিল বরাদ্দে চাপ দিয়ে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করায় জলবায়ু বিপর্যয় রোধে সমস্যা হয়েছে, এখন জো বাইডেন যে ভূমিকা নিয়েছেন তাতে পরিবেশবাদী মহল ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সেই সাথে করোনা মহামারি রোধেও বিশ্বের ছোট বড় সকল দেশ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে – আমরা তা আশা করি। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের টিকা দেওয়ার কথা বলেছে, এব্যাপারে দু দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হতে পারে।
জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যক্তি বাংলাদেশ সফরে এলেন, এতে দু দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠতর হবে বলে আমরা আশা করি।
আমরা আশা করি বিশ্বনেতাদের আগামী সম্মেলনে উষ্ণায়ন রোধ, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য বরাদ্দ ছাড়ের ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। আমাদের প্রিয় এই ধরিত্রীকে জলবায়ু ও পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ভূমিকা রাখবেন – এটিই বিশ্বের জনগণের প্রত্যাশা।