অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকারের একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নানা কারণে নেতিবাচক বিষয়ে পরিণত হতে চলেছে নানা কিসিমের দুর্নীতি আর একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর খামখেয়ালিপনার শিকার হয়ে। বিষয়টি হচ্ছে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নশীল দেশ ও একবিংশ শতকের উপযোগী একটি রাষ্ট্রের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের প্রয়াস-প্রচেষ্টা ও সে ব্যাপারে সরকারি লোকজনকে নানাভাবে বিনোদিত-প্রণোদিত রাখার পরও তাদের একটি অংশ অসাধু পথে সরকারের সদিচ্ছাকে ভন্ডুল করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। অন্যদিকে বাস্তবে এ ব্যাপারে সরকারের উঁচুপর্যায়ের কনসেপ্ট বা ধারণার সমতালে তৃণমূল প্রশাসন চলতে পারছে কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকা প্রথম পৃষ্ঠায় একটি খবর ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘জন্মনিবন্ধনের অনলাইন ফি দিতে মুরগি বিক্রি!’ এটি চট্টগ্রাম জেলার একটি বর্ধিষ্ণু উপজেলা মিরসরাইয়ের পূর্ব হিঙ্গলি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া একটি বেদনাদায়ক ঘটনার ওপর প্রতিবেদন। ৫ সদস্যের পরিবারটির কর্তা কবিয়াল দলের সঙ্গে মাদল বাজিয়ে জীবিকানির্বাহ করতেন। করোনাকালের প্রভাবে তিনি এখন পূর্ণ বেকারত্বের শিকার হয়েছেন। কারণ, কোথাও এখন আর কবিগান বা লোকবিনোদনের অনুষ্ঠানাদি হচ্ছে না। এ অবস্থায় গৃহকর্ত্রী বাধ্য হয়ে হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে কোনো রকম গ্রাসাচ্ছানের ব্যবস্থা করলেও সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়নে তার সপ্তম শ্রেণিপড়–য়া কন্যার জন্মনিবন্ধন অনলাইন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। স্কুল থেকে জানানো বার্তা মতে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে জানতে পারেন মেয়ের পিএসসি সনদ ও ৫০০ টাকা লাগবে। হাতে টাকা না-থাকায় মেয়ের জন্মনিবন্ধনের ফি’র টাকা জমা দিতে তার ডিমপাড়া ওই মুরগিটি তাকে বিক্রি করতে হয়েছে। আবার ইউনিয়ন অফিস থেকে কারো-কারো জন্মনিবন্ধন করা হলেও তা অনলাইনে না-হওয়ায় নতুন করে জন্মনিবন্ধন করতে নানা রকমের প্রমাণাদি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতেও। তার মানে গ্রাম্যটাউট ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের টাকা-পয়সা ছাড়া কাজ না-করার বিষয়টি সাধারণের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করছে। অমূলক হলেও তাদের ধারণা হলো, তাদেরকে হয়রানি করার জন্যই বুঝি এসব উদ্যোগ-আয়োজন! অথচ সরকারি নির্দেশনা হলো, একজন নাগরিকের জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত নিবন্ধন বিনা ফিতে পাওয়া যাবে। জন্ম বা মৃত্যুর পর ৪৫ দিন পার হলে ৫ বছর পর্যন্ত নিবন্ধন ফি ২৫ টাকা। পাঁচ বছর পর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুর নিবন্ধন ফি হবে ৫০ টাকা। অন্যদিকে জন্মতারিখ সংশোধন ফি ১০০ টাকা, মা-বাবার নাম-ঠিকানা সংশোধন ফি ৫০ টাকা। কিন্তু উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ ও তথ্যসেবাকেন্দ্রগুলো সরকার নির্ধারিত এসব ফি মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ দৌড়ঝাঁপ করে মরছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করছে। কিন্তু সকলে তো আর তা পারছে না। এতে বাড়ছে চরমভাবে হতাশা বাড়ছে। অন্যদিকে অসাধুরা এ বিষয়ে সতর্ক না-হলে ভবিষ্যতে আরও বিপদে পড়ার কথাও বেশ ভালোভাবে সর্বত্র চাইর করে বেড়াচ্ছে।
এক্ষেত্রে সরকার এবং সরকারি উদ্যোগকে জিম্মি করে যে অসাধু শ্রেণিটি অপতৎপরতায় লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত।
মতামত সম্পাদকীয়