জনপ্রিয় হচ্ছে কুলফি মালাই

হুমাইরা তাজরিন »

রাস্তায় অল্প হাঁটলেই ঝরছে ঘাম। ক্লান্ত-শ্রান্ত এ সময়ে প্রাণ জুড়াতে সুস্বাদু কুলফি মালাই নগরবাসীর প্রিয় হয়ে উঠছে। জানা যায়, বাংলায় কুলফি মালাইয়ের আগমন ষোড়শ শতাব্দীতে। মুঘল সা¤্রাজ্যের অবদান এই খাবারটি দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে ইতোমধ্যে কুলফি মালাইকে নিজের করে নিয়েছে বাংলার কুষ্টিয়া জেলাবাসী। কারণ এর স্বাদ বাংলার অন্যসব এলাকা থেকে ভিন্ন। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া এবং শিলাইদহ নামের গ্রাম দুটি ‘কুলফি মালাইয়ের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

জানা যায়, উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে (১৮৯১-১৯০১) শিলাইদহে পৈত্রিক জমিদারি পরিচালনা করতে এসে স্বয়ং কবিগুরু মজেছিলেন কুলফি মালাইয়ে।

সেই বিখ্যাত খাবারটি এবার মিলছে চট্টগ্রামের বেশকিছু জায়গায়। নগরীর চকবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট , কাজির দেউড়ি, জামালখান, জিইসি, ২ নম্বর গেইটে দেখা মিলছে এর।

জামালখানে কুলফি মালাই নিয়ে কথা হচ্ছিলো, মো. নাসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইসক্রিমের মতো হলেও এটিতে একটা দেশীয় স্বাদ আছে। মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। আমি জামালখানে বসলে পর পর কয়েকটা খাই। তবুও প্রাণ ভরেনা।’

ফাতেমা জাহানের তাড়া ছিলো বলে চাইছিলেন সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন কুলফি মালাই। বিক্রেতা জানালেন, কুলফি মালাই দ্রত খেতে হবে। অগত্যা ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে খেয়ে নিলেন প্রিয় কুলফি মালাই।

কুলফি মালাই দেখতে আইসক্রিমের মতো হলেও এটি আইসক্রিম নয়। কেননা আইসক্রিমের মতো শক্ত হয়না এটি। মূলত দুধে তৈরি মালাইতে চিনি, এলাচ,বাদাম, কিসমিস ,মশলা এবং খেঁজুরের গুঁড় মিশিয়ে বোতলে সংরক্ষণ করা হয়। বোতল থেকে স্টিলের ছাঁচে ঢেলে সেই ছাঁচকে রাখা হয় জমানো বরফের জারে। তাতেই জমে ওঠে মালাইয়ের কুলফি। তবে খুব বেশি ঠান্ডা না হওয়ার কারণে বেশি শক্তও হয়না কুলফিটি। তাই এটি হাতে পাওয়া মাত্র দ্রুত সাবাড় করতে হবে। এলাচ, কাজু, পেস্তা মিশ্রিত মালাইয়ের কারণে কুলফির রয়েছে হৃদয়হরণকারী ঘ্রাণ। সেই সঙ্গে মিস্টি স্বাদের এই খাবারটির হিমশীতল বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে অনন্য মাত্রা। তবে একটি কুলফিতেই যে ক্রেতার প্রাণ ভরে যাবে সেই নিশ্চয়তা কিন্তু নেই।

এর প্রস্তুত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়, দুধ ফুটিয়ে শুরুতে ঘন করে মালাই তৈরি করা হয়। যাতে এক এক করে চিনি, এলাচ, নানা রকম বাদাম, খেঁজুরের গুড় এবং গোপন মশলার (ব্যবসায়িক কারণে এ মশলার রহস্য ফাঁস করা হয়না সাধারণকে) উপাদানের সঙ্গে মেশানো হয়। এরপর বরফে রাখা হয়। প্রায় ১৫ কেজি দুধ থেকে মালাই তৈরির পর এতে বরফ যুক্ত করা হয়। এর থেকেই তৈরি হয় ৮০ থেকে ১০০ পিস কুলফি।

নগরীর জামালখান মোড়ে কথা হয় কুলফি মালাই বিক্রেতা মোহাম্মদ তানজিমের সঙ্গে। তিনি জানান, দেড় মাস আগে কুলফি মালাইয়ের এই সার্ভিসটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছে। এখানকার কোম্পানি থেকে ভ্যানসহ কুলফি নিয়ে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি করি। চকবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট আমাদের ভ্যান থাকে। জামালখান ,কাজির দেউড়ি, দেওয়ানহাট, ২ নম্বর গেইটও থাকে। বেলা ১২ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত এই কুলফিটি বিক্রি হয়। ২ লিটারের ৪ টি বোতল প্রতিদিন বিক্রি হয়। প্রতি বোতলে ৮০ পিস কুলফি হয়। তার মধ্যে ছোট সাইজ ১০ টাকা, বড়োটি ২০ টাকায় বিক্রি হয়। দেখা যায় যে যেটুকু আনি সবটুকুই বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে একবার খেলে বার বার খেতে চান।’