জঙ্গল সলিমপুরে উপশহর গড়ে তোলা হোক

জঙ্গল সলিমপুর, লতিফপুর, ভাটিয়ারি, জালালবাদ ও উত্তর পাহাড়তলী মৌজায় ৩০৭০ একর খাস জায়গা আছে। খতিয়ানভুক্ত সরকারি এই জায়গা ছাড়াও এখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গাও রয়েছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ পাহাড় কেটে উজাড় করা হয়েছে। সেখানে বসতি গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। জায়গাটি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। সরকারি পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এই অবৈধ সাম্রাজ্য।
২০২২ সালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নান্দনিক উপ-শহর গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়ে জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। দফায় দফায় প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন সরকারের তৎকালীন একাধিক মন্ত্রী ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অবৈধ দখলকারী ও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করে এই এলাকা দখলমুক্ত করা অনেকটা কঠিন ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য। ২০২২ সালের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্যসচিব পরিদর্শন করতে গেলে সে সময় মানববন্ধন করেছিল ছিন্নমূল নামধারী কয়েকশ’ মহিলা। টানা তিন মাস ধরে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে কঠোর অবস্থানে ছিল সরকার।
পাহাড়খেকো-দখলকারীদের উচ্ছেদ করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ উন্নয়নের মহাপরিকল্পনাও নিয়েছিল সরকার। জায়গা বরাদ্দ চেয়ে ৪৮ প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে অজানা কারণে থমকে যায় সরকারের মহাপরিকল্পনা। অগ্রগতি ছাড়াই দুই বছর ধরে পড়ে রয়েছে নান্দনিক উপ-শহর গড়ে তোলার এই প্রকল্প।
২০১৩-১৪ সালে বায়েজিদ লিংক রোড চালু হওয়ার পর পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ছিন্নমূল সমিতির নামে পাহাড়-টিলা কেটে সরকারি জায়গা দখল করে চলেছে। এতে প্লট তৈরি করে বেচাকেনা করা হয়। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকজন খাসজমি কিনে অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা তৈরি করছে। সবাই জানে এসব এলাকায় সন্ত্রাসী-অপরাধীদের আশ্রয়স্থল ও অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল।
জানা গেছে, সিডিএ’র লিংক রোড এলাকার আশপাশে প্রতি শতক জায়গা ৭-৮ লাখ টাকা বেচাকেনা চলছে। সেই হিসাবে ৩১শ খাস জমির মূল্য ৭-৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও জঙ্গল সলিমপুরে বৃক্ষসহ খনিজ সম্পদ রয়েছে। সবমিলে ১০-১২ হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পদ পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা দখল করে রাখবে তা তো হতে পারে না।
এই অবস্থার অবসান চাই। নগরের আবাসন সংকট কাটাতে এই এলাকায় একটি উপশহর গড়ে তোলা হোক। শহর দিনদিন বর্ধিত হবে। সে চাহিদা মেটাতে সেদিকে নগরের বিস্তৃতি না ঘটিয়ে উপায় নেই।