জোবায়ের রাজু »
রাশেদ খোঁড়াতে খোঁড়াতে স্কুলে এসেছে দেখে সবাই প্রশ্ন করল, ‘তোর পায়ে কি হয়েছে?’
খুব সংক্ষেপে রাশেদের জবাব, ‘পায়ে ভীষণ ব্যথা পেয়েছি।’
কীভাবে ব্যথা লেগেছে বা পায়ে জখম লাগার নেপথ্যে কী ঘটেছে, সেসব ব্যাখ্যা করতে রাশেদের যে ভালো লাগছে না, সহপাঠীরা তা বুঝে নিল। তাই তারা আর পায়ে ব্যথা লাগার মূল ঘটনা জানতে না চেয়ে বরং রাশেদকে পায়ে যত্ন নেওয়া এবং চলাফেরায় সচেতনতা অবলম্বনের বাণী শোনাতে থাকে।
স্কুলের প্রথম ঘন্টা পড়ার বিশ মিনিট আগেই জয় এল ক্লাসে। জয় একটু মিতভাষী স্বভাবের ছেলে। কথা বলতে খুব একটা দেখা যায় না তাকে। মেপে মেপে কথা বলার এই স্বভাব কি বেশিরভাগ সহপাঠীরা মনে করে জয়ের এক ধরনের দাম্ভিকতা। আসলে তা নয়।
সেই মিতভাষী জয় আজ আগ বাড়িয়ে এল রাশেদের কাছে।
‘তোমার পায়ে কী হয়েছে? এভাবে হাঁটছো কেন?
ব্যথা লেগেছে।
কীভাবে?
উঠোনে খেলতে গিয়ে।
সত্যি?
তোমার বিশ্বাস হয় না?
না। আমি জানি তুমি পায়ে কীভাবে ব্যথা পেয়েছ।
ইয়ে মানে…
বলব?
বলো।
আমাদের বাড়ির দেয়াল টপকে পালিয়ে আসার সময় তুমি খুব ব্যথা পেয়েছ।
না না।
মিথ্যে বলবে না রাশেদ। আমি সব দেখেছি জানালা দিয়ে। কাল বিকেলে আমাদের বাড়ির দেয়াল টপকে আম বাগানে ঢুকে আম কুড়াচ্ছিলে আর আমার বাবার উপস্থিতি টের পেয়ে জানের ভয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে আসার সময় দপ করে পড়ে গিয়েছ।
ইয়ে মানে…
লজ্জা পেও না রাশেদ। জানি তোমাদের বাড়িতে আম গাছ নেই, তাই মধুমাসে পাকা আমের লোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই হয়তো আমাদের বাড়িতে এভাবে গিয়েছ।
দোহাই জয়, কাউকে বলিও না এই ঘটনা।
বলব না। তবে আমি তোমার জন্য কিছু আম নিয়ে এসেছি। আমার স্কুলব্যাগে আছে। ছুটি হলে দেব।
জয়ের কথা শুনে রাশেদ হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাশেদকে এভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে জয় বলল, ‘আমার বাবার ভয়ে তুমি যে ভয়ে দূরে পালিয়ে যাচ্ছিলে, সেসব দেখে খুব মায়া হল তোমার জন্য। যাই হোক, চলো ক্লাসে। যাই ঘন্টা পড়েছে।