ছড়া ও কবিতা

সোনামুখি দামাল ছেলে

আলমগীর শিপন

পৌষ পার্বণের পিেিঠ খেতে বসে কত না গল্প হত
সেই দিনকার মুখোমুখি যারা তারাই বুঝবে শত
আজ-কালকার ছেলেপুলেদের জীবন ঠুনকো আঁটি
এ সব শুনলে ভাবে কত ওরা মধুরতা ছিল খাঁটি।

দইওয়ালা যেত মেঠোপথ ধরে হাঁকিয়ে গলার স্বর
সিকিটা পকেটে ঝনঝঝনাতো মাতাতো পর পর।
রোদশুকানো ধানে জিলাপি পেতাম আরো পেতাম কটকটি
বড়দের চোখ ফঁকি দিয়ে মোরা খেয়ে নিতাম ও সব ক’টি।

ইঁদুরের গর্তে সাত গোলা ধান ভরা ছিল সাজে সাজে
দুষ্ট ছেলেরা দল বেঁধে গিয়ে তুলে নিত তাদের কাজে।
ফুটবলখেলে সাঁজবেলাতে ফিরতো বোঝা মাথায়
অংক স্যারের অংকের ফল মিলবে তো কাল খাতায়?

কিষানীর মনে কতই না শান্তি সুখেরা কিলবিল করে
মায়া-মমতায় ঘেরাবাগানে হিংসারা আসেনি পরে।
এ পাড়ার কালু ও পাড়ার দুলাল সবাইতো ছিল ভাই ভাই!
আজ দেখি সব ভেদাবেধে ভরা, ওরা দেখেও দেখে না তাই।

ভোরবিহানে পাড়ার মক্তব জেগে উঠতো মৌলভীর হাঁকে
আরবী পড়ার সুমধুর টানে মন মাতাতো গাঁয়ের বাঁকে।
ছেলেমেয়ে সব এক কাতারে বসে গাইতো পল্লীগান
বিয়েবাড়িতে কলাপাতার গেইটে বইতো আনন্দের বান।

সেই সব দিন মনে করে আজও ভাসি স্মৃতিমাখা কল্পনায়
আজকের দিনের খোকাখুকুরা ও সব ভাবেও না জল্পনায়।
আমরা ছিলাম সোনালী যুগের সোনামুখি দামাল ছেলে
তোমরা এখনো একবারও ভাবো না আসলে কী পেলে!

 

আমাদের ইশকুলে

আলমগীর কবির

আমাদের ইশকুলে
ফুল আছে কুঁড়ি আছে,
ফুল হাসে কুঁড়ি হাসে
হাসির না জুড়ি আছে!

আমাদের ইশকুলে
ছোট ছোট পাখি আছে,
হইচই কলরোল
সুরে ডাকাডাকি আছে!

ফুলেদের ঘ্রাণে ঘ্রাণে
পাখিদের গানে গানে,
কত আলো চমকায়
খুশি মাখা প্রাণে প্রাণে!

টিফিনের ফাঁকে ফাঁকে
হাসি মাখা মুখ দেখে,
ঝিলিমিলি রোদ এসে
যায় বুকে সুখ এঁকে!

আনন্দ বুকে নিয়ে
বাড়ি ফিরি ছুটি শেষে,
যেই পথে আলো আছে
সেই পথে জুটি হেসে।

 

খুকুর হাসি

উৎপলকান্তি বড়ুয়া

ভোরের ঠোঁটে রোদের হাসি কী ঝলমল
ঘাসের শীষে হাসে শিশির কী টলমল!
চিরল চিকন হাসির মাতম বাঁশ বনে
শুভ্র হাসির সুর ফোয়ারা কাশবনে।

নদীর জলে ঢেউয়ের হাসি কী চিকচিক
প্রবল হাসি হারিয়ে ফেলে দিক-বিদিক
ঘোমটা টানা অতুল হাসি গাঁয়ের বধূর
অঘ্রাণে ধান ক্ষেতের হাসি মধুর মধুর।

ফল ফসলের সজীব সজীব রাঙা হাসি
লাল সবুজের বিজয় দিনের চাঙ্গা হাসি।
সুখের হাসি ছড়িয়ে থাকে মন জুড়ে।
মা‘র হাসি রয় বুকে সারাক্ষণ জুড়ে।

মিষ্টি হাসি মধুর হাসির নেই রে তুল
প্রাণ খোলা এই খুকুর হাসি স্বর্গ ফুল।

 

সুন্দরবন

বাসুদেব খাস্তগীর

অপরূপ বনভূমি সুন্দরবন
রূপ দেখে আমাদের ছুটে যায় মন।
বাঘ সাপ হরিণেরা করে বসবাস
লোকালয়ে ঢুকলেই বাঘ হয় ত্রাস।

ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন
গাছে গাছে মৌমাছি করে ভনভন।
মধু পাই বন থেকে একদম খাঁটি
সম্পদ এ দেশের- এ বনের মাটি।

জাতীয় এ উদ্যান সুন্দরবন
ছুটে যেতে মনটা তো থাকে উচাটন।
প্রকৃতির বিস্ময় – কত পশুপাখি
বাস করে বন জুড়ে করে মাখামাখি।

দুর্যোগে আমাদের বন করে পার
কত ভাবে আছে দেখি অবদান তার।
সুন্দরবনে আছে সুন্দরী গাছ
সুন্দরবন নাম, তাই জানো আজ।

 

মন উড়ে যায়

শাহীন খান

পাখির সুরে সুরে-
মন উড়ে যায় মিষ্টি যে রোদ্দুরে।
হাওয়ার তালে তালে
পদ্মপুকুর, খালে
উদাস দুপুর ঘুঘু ডাকা ক্ষণে
যায় চলে যায় হিজলতলির বনে।

বিকেল হলে ঘুরবে নদীর কূলে
আচমকা সে উঠবে হেলেদুলে।
সন্ধ্যা হলেই ফিরবে সে যে ঘরে
চেয়ার পেতে পড়ে সে তো পড়ে।
রাত্রি হলে চোখ জুড়ে তার ঘুম
সব যখন হয় নিরালা নিঝঝুম
স্বপ্ন তারে দেয় গালে দেয় চুম।

 

সরষে হর্ষে

সাদমান হাফিজ শুভ

নদীর চরে রং মেখেছে
সরষে ফুলের বন,
রূপের ছটায় হর্ষে ওঠে
সুজন মাঝির মন।

এলো হাওয়ার মিষ্টি সুরে
দুলছে সারাক্ষণ,
ফুলে ফুলে বংশী বাজে
অলির গুঞ্জরণ।

কোত্থেকে এক মাছরাঙা ঐ
বসল ফুলের গায়,
রঙের মাঝে রং লেগেছে
পুঁটি ধরে খায়।

সন্ধে নামার একটু আগে
ডাকছে মায়ে আয়,
ম-ম গন্ধে মনটা ভোলে
যেতে নাহি চায়।

 

গ্রামের স্নিগ্ধতা

আব্দুস সাত্তার সুমন

গ্রাম গঞ্জের স্নিগ্ধতাতে
ঠান্ডা হিমেল ভোরে,
সুবাসছড়া সবুজ মাঠে
আমায় পাগল করে।

শীত-গরমের মিশ্রণেতে
ছুটে চলে গাড়ি,
বসুমতি ছোট্ট গাঁওয়ে
আমার বসতবাড়ি।

বাড়ির পাশে ছোট্ট নদী
উজান পবণ টানে,
হলদে চাদর বিছিয়ে আছে
সুবাস ছড়ায় ঘ্রাণে।

মাটির পথে গন্ধ বিলায়
সুষম বাতাস কই?
গাছপালাকে নিধন করে
সবাই থাকছে ওই।

বোরো, আমন, ইরি ধান আর
নতুন সবজি দোলে,
শুদ্ধ বাতাস পেতে হলে
যাবে গ্রামের কোলে।

 

হাতির ছানা

নকুল শর্ম্মা

কান দুটো তার কুলোর মত
থামের মত পা,
সবাই বলছে দেখে যা রে
এলো হাতির ছা।

লম্বা একটা শুড় বেঁকিয়ে
চলছে হেলেদুলে,
শরীরখানা নাদুসনুদুস
মসৃন ও তুলতুলে।

মায়ের সাথে ভাব যে ভীষণ
যায় না সরে দূরে,
মা হাতিটা করছে আদর
আগলে রেখে শুড়ে।

দেখবি যদি হাতির ছানা
আয় রে ছুটে আয়,
খোকাখুকু কই রে তোরা
সময় চলে যায়।

 

বইমেলা

সজীব মালাকার

খেলা রেখে চল্ সবে যাই
দেখতে যে বইমেলা,
একসাথে যাই দল বেঁধে সব
আজকে বিকেল বেলা।

কিনব গিয়ে গল্প, ছড়া
এবং ছবির বই,
ঘুরবো মেলায় সবাই মিলে
করবো যে হইচই।

গল্প, ছড়া, ছবি আঁকার
নেইতো বইয়ের শেষ,
রঙিন বইয়ের রঙিন ছবি
গল্প, ছড়া বেশ।

বই আমাদের বন্ধু এবং
বই তো প্রিয় স্বজন,
আমরা সবাই মিলে যে আজ
কিনবো ডজন ডজন।

 

খুকি মণি

হানিফ রাজা

খুকি মণি হাসে ফুল ভালোবাসে
দেখে তার হাসি হর্ষে যায় ভাসি
করে কত খেলা কেটে যায় বেলা
চোখেমুখে মায়া বাড়ায় যে কায়া।

দেখে তার হাসি মুখ
পরানে যে লাগে সুখ
শতো শতো আবদার
শুনি তাই বারবার।

মিষ্টি হাসি দিয়ে বই হাতে নিয়ে
আধো আধো পড়া মিষ্টি মিষ্টি ছড়া
চোখে স্বপ্ন ভরে আঁকিবুঁকি করে
বড় সে যে হবে পণ করে তবে।

সবার চোখের মণি
দেশের সোনার খনি
মুখে সদা হাসি ঝরে
তাকে দেখে মন ভরে।