ছড়া ও কবিতা

কনকনে শীত

হানিফ রাজা

মুড়ির থালা হাতে নিয়ে
খায় যে খুকি মিঠা দিয়ে
মিষ্টি হাসি মুখে,
শিশির ঝরে সকাল বেলা
হিমের হাওয়া করে খেলা
কাঁপন ধরে বুকে।
খুকির বাবা মস্ত চাষি
চলে মাঠে মুখে হাসি
চাদর দিয়ে গায়ে,
তাহার সাথে বলদ আছে
তামাক হুক্কাও রাখছে কাছে
লাঙল কাঁধে পায়ে।
কনকনে শীত কাঁপন ধরায়
খড়ের গাদায় ওমে ভরায়
মিঠে রোদ্দুর মাঝে,
অরুণ আলোয় ফুলের মেলায়
ভ্রমরাকুল মাতে খেলায়
সকাল দুপুর সাঝে।

 

রোদের অপেক্ষায়

লিটন কুমার চৌধুরী

আয়রে আমার সূর্য মামা
মেঘ ফুঁড়ে তুই আয়,
শিশির কণায় চুমো এঁটে
ঘরের জানালায়।

হিম হিম হিম কাঁপছি শীতে
রোদেও অপেক্ষায়
ঘুমকাতুরে বলবে সবাই
বকবে বাবা মায় ।

আয়রে আমার সূর্য মামা
বাড়ির আঙ্গিনায়
বাইরে যাবো, পাখির ডানায়
মেলতে হাওয়ায় চায়।

তুই উঠলে আমি উঠি
তোরাই উষ্ণতায়,
তাই বলেছি সূর্য মামা
আয় ছুটে তুই আয়।

রোদের ছটা দিলে তবে
ঘরের বাহিরে হই ,
তখন না হয় রোদ মেখে গায়
পড়র অবশ্যই।

 

সেসব দিন ছিল রঙিন

মাসুম মোরশেদ

ঢেকি ছাঁটা চালের আটা
আর পাটালী গুড়,
নদী থেকে আসত ভেসে
ভাটিয়ালী সুর।
ভোর বিহানে চুলার পাড়ে
পিঠা খাবার ধুম,
পিঠা খাবার ভীষণ লোভে
তাই পারিনি ঘুম।
মায়ের হাতে পিঠাগুলো
মজার ছিল সব,
মাঝিমাল্লার গান শুনতাম
আনন্দের শৈশব।
এখন তোমরা পাও না সেসব
কিনে কিনে খাও,
সব হয়েছে যন্ত্র এখন
নিরস দিন কাটাও।

শীতের প্রাতে শিশুর মেলা

আসাদুজ্জামান খান মুকুল

হাতে নিয়ে মুড়ির থালা
খোকাখুকির খাবার পালা
চলে শীতের প্রাতে,
গুড়মুড়িতে খাবার জন্যে
মনটা সদা থাকে হন্যে
ঘুম আসেনা রাতে!
প্রাতে যবে হিমেল হাওয়া
ঝিরঝিরিয়ে করে ধাওয়া
গায়ে কাঁপন ধরে,
খোকাখুকি ওম যে পেতে
রৌদ্রে বসে মুড়ি খেতে
চলে খড়ের ‘পরে।
রোদের আলোয় খড়ে বসে
খায় যে তারা মনের যশে
জমায় রঙের মেলা,
বাদ থাকেনা বুড়োবুড়ি
খেয়ে পিঠা পায়েস বুড়ি
ভাসায় সুখের ভেলা !

 

রাঙামাটির পথে

কাব্য কবির

খাগড়াছড়ি,রাঙামাটি সবুজ পাতার দেশ,
হাওয়ার তালে পাতা নাচে দেখলে লাগে বেশ।
পাহাড়েতেই গড়ে ওঠে পাহাড়িদের বাড়ি,
চারিদিকে সবুজ-শ্যামল গাছ-গাছারির সারি।
সবুজ পাতার ডালের ফাঁকে নাচে প্রজাপতি,
নেচে নেচে দেখায় তারা রঙের কেরামতি।
লাল মুনিয়া ডাকে,
পাতার ফাঁকে ফাঁকে
নরম সবুজ ঘাসে,
আলতো রোদের ছোঁয়া পেয়ে মিটমিটিয়ে হাসে।
ভরদুপুরে বুনোমোরগ উঠছে ডেকে গাছে,
ফুড়ুৎ করে যায় সে উড়ে কেউ গেলে তার কাছে।
লাল পাহাড়ের মেয়ে ঝর্নার মিষ্টিমধুর হাসি,
খুশি ছড়ায় সবার মনে যেন রাশি রাশি।
মনোরম এই দৃশ্য দেখি চড়ে ঘোড়ার রথে,
মনটা আমার হারিয়ে যায় রাঙামাটির পথে।

 

শৈশব

রেবেকা ইসলাম

নানান রকম রঙে ভরা শৈশব
কোন সে দূরে হারিয়ে গেলি, ক‌ই সব ?
ছুটির দিনে সবাই মিলে বিকালবেলা
চক্ষু বেঁধে কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলা।
শীতবিকেলে ছাদে, মাঠে ওড়াও ঘুড়ি
অন্য ঘুড়ি কেটে গেলে বাজাও তুড়ি!
বর্ষাকালে বৃষ্টি এলে কাদা কাদা
হোক না তাতে, মাঠে খেলি দাড়িয়াবাঁধা।
কিংবা ঘরে বসে বসে লুডু খেলো
তার বানিয়ে দুদিক থেকে হ্যালো হ্যালো।
ইচিং বিচিং চিচিং খেলা, এবার ওঠো
রঙিন রঙিন প্রজাপতির পেছন ছোটো।
কাগজ কেটে লিখে খেলা, চোর ও পুলিশ
সেই দিনক্ষণ যায় কি ভোলা, কেমনে ভুলিস?

 

ভূতের অসুখ

নকুল শর্ম্মা

ভূতের বাড়ি গড়াগড়ি
আঁশটে গন্ধের ছড়াছড়ি
মামদো ভূতের ছানা,
কাল যেনো সে কী খেয়েছে
মাথায় আবার তেল দিয়েছে
ফেঁপেছে পেট খানা।

পেট হয়েছে ঢোল
বাঁধলো গণ্ডগোল
শেওড়া তলার কবিরাজ
বন্ধ রেখে সকল কাজ
করছে কলরোল।

মামদো ভূতের কান্না দেখে
মেছো ভূতটা আসলো হেঁকে
দেখি একটু দাঁড়া?
খাবার দাবার দেখে খাবি
বিলের ধারে আর না যাবি
বুঝলি হতচ্ছাড়া?